জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্তত ৪ হাজার ৬৩৪ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। এছাড়া বিক্ষোভ দমনে ১৬টি হাতবোমা ও গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। ঢাকার ১২টি থানা এবং চট্টগ্রামের ১০টি থানায় দায়ের করা ১০০টি মামলার নথি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল নোমান এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. কাজী জাহেদ ইকবালের নেতৃত্বে লইয়ার্স ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শক্তি, পরিবেশ ও উন্নয়ন এ বিশ্লেষণ করেছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গুলি ছোড়া হয়েছে ৭.৬২ মিলিমিটার সেমিঅটোমেটিক রাইফেল, সাবমেশিন গান, বিডি জিরোএইট অ্যাসল্ট রাইফেল, টরাস ৯ মিলিমিটার রিভলবার এবং টাইপ ৫৪ পিস্তল থেকে। এর মধ্যে ৬২টি ভারী বল কার্তুজও ছিল। এতে দেখা যায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, বিক্ষোভ দমনে ঢাকা-চট্টগ্রামে মাত্র ২ হাজার ৭৩৩ রাউন্ড টিয়ারশেল, ৯৮৪টি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে।
এমনকি তুলনামূলক কম-প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মারাত্মক সীসা কার্তুজ ব্যবহার করে, যার ফলে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন এবং অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। মোট ৮ হাজার ৯৯৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়া হলেও সীসা কার্তুজ ব্যবহার করা হয়েছে ১২ হাজার ৩৪০ রাউন্ড। আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই ফারহান ফাইয়াজ (১৭) নিহত হয় এরকম তুলনামূলক কম মারণঘাতী অস্ত্রের গুলিতে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করা তালিকা অনুযায়ী, বিক্ষোভে সারাদেশে অন্তত ৭১৭ জন নিহত হয়েছে, তবে দিন যত যাচ্ছে নিহতের সংখ্যা তত বাড়ছে।
ঢাকার শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রামপুরা, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম ও তুরাগ এবং চট্টগ্রামের চান্দগাঁও, কোতয়ালী, পাহাড়তলী, হালিশহর, ডবলমুরিং, পাঁচলাইশ, খুলশী, বাকালিয়া থানায় করা মামলার প্রাথমিক বিবরণী দেখে এসব তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী বাহিনী আত্মরক্ষার্থে'র নামে সীমা লঙ্ঘন করেছে যা স্পষ্টতই সংবিধানের চেতনা ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
আপনার মতামত লিখুন :