বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে অদৃশ্য শক্তি। আরও সক্রিয় হচ্ছে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্রকারীরা। তাদের মোকাবিলা করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অন্যথায় ব্যর্থ হবে সব অর্জন। এ পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে যত কাজ হয়েছে, এর ৭০ ভাগই হয়েছে বিএনপির আমলে।
রংপুর বিভাগের তিন জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধায় মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বিকালে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, প্রতিরোধভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী ১০ বছরের মধ্যে একটি সুস্থ তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পাঠক্রমে মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়ে সুনাগরিক আর নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম তারুণ্য গড়তে চাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু পরিচয়কে নির্বাসনে পাঠিয়ে সবার অংশগ্রহণে আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে আমাদের সুদৃঢ় ঐক্য ধরে রাখতে হবে। সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্যের ভিত্তিতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, যখন স্বৈরাচারের ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি, তখন আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল বিএনপি। বিএনপি অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় স্বৈরাচারের পরিবর্তন প্রত্যাশা করেনি। বরাবরই আমরা বলেছি, ফয়সালা হবে রাজপথে।
তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদি সুষ্ঠু ভোটে ক্ষমতায় আসে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা হবে। ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’র সামান্য একটি অংশ অর্জিত হয়েছে, সম্পূর্ণভাবে এখনো আমরা অর্জন করতে সক্ষম হইনি।
দেশের মানুষ যখন তার রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, যখন আমরা বলতে পারব- এ দেশের মানুষের অধিকার কম-বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যখন কম-বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যখন মোটামুটিভাবে আমরা প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দিতে পারব, এই দেশের নারীদের ক্ষমতায়ন যখন আমরা করতে পারব, এই দেশের বেকার সমস্যার কম-বেশি সমাধান আমরা করতে পারব, তখনই আমরা বলতে পারব-‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এর আগে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ‘প্রশ্নোত্তর পর্বে’ অংশ নেন তিনি। এ সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেন তারেক রহমান।
বিএনপির ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে : কুড়িগ্রামের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। এ দায়িত্ব নিতে হবে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের। আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনে সক্ষম হলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। কেননা আমরা দেশের ২০ কোটি মানুষের সঙ্গে কমিটমেন্ট করেছি। তারেক রহমান বিকাল ৪টা ২৫ মিনিট ভার্চুয়ালি কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার প্রশিক্ষণ কর্মশালায় যোগ দেন।
এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু সকাল সাড়ে ১০টায় কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলমাস কমিউনিটি সেন্টারে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
দুদু বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অতি সম্প্রতি ডিসেম্বরে নির্বাচন করবেন বলেছিলেন। তারপর আবার মধ্যরাতে সংশোধন করে প্রেস নোট দিয়ে জুনে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। আমরাও চাই যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া হোক। এজন্য আন্দোলনের দরকার নেই।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের প্রশ্নে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ৩১ দফার বিকল্প নেই।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরও যোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু ও ড. মাহাদী আমিনসহ, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিবাসহ জেলা বিএনপির নেতারা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান। কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন ৬ শতাধিক নেতা।
লালমনিরহাট: লালমনিরহাট জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে দিনব্যাপী কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। প্রধান প্রশিক্ষক হিসাবে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেত্রী রাশেদা বেগম হীরা ও নেওয়াজ হালিমা আরলি। কর্মশালায় পাঁচ শতাধিক প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়েছেন।
গাইবান্ধা: গাইবান্ধা জেলা ইনডোর স্টেডিয়াম গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকরা অংশগ্রহণ করেন। গাইবান্ধা বিএনপির সভাপতি ডা. ময়নুল হাসান সাদিকের সভাপতিত্বে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন।
অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক, ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর মোর্শেদ হাসান খান, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, মিডিয়া সেলের সদস্য ফারহানা শারমিন পুতুল, বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফজলুর রহমান খোকনসহ স্থানীয় নেতারা। ###
আপনার মতামত লিখুন :