মেঘালয়ে গণপিটুনিতে নিহত শেরপুরের যুবক আকরাম হোসেনের (৩০) মরদেহ ১১ দিন পর হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার (১৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার মধ্যনগর এলাকার বান্দ্রা হাজংপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ হস্তান্তর করে।
আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ গ্রহণ করেন নিহতের ভাই শেখ ফরিদ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মুসা মিয়া। এ সময় বিএসএফ, বিজিবি, কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানসহ দুই দেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১১ আগস্ট ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার খনজয় কৈথাকোণা গ্রামের একটি বনাঞ্চলে স্থানীয়দের গণপিটুনিতে মারা যান আকরাম হোসেন। স্থানীয়রা তাকে আটক করে গুরুতর আহত অবস্থায় ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে মহেশখোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আকরাম শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকুড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে। পরিবার জানায়, তিনি প্রায় আট বছর আগে বিয়ে করেন এবং স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বরিশাল শহরের রুপাতলী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। আকরামের দুই ছেলে এবং এক বছরের একটি কন্যা রয়েছে। তিনি পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক ছিলেন।
পরিবারের দাবি, ৬ আগস্ট বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন আকরাম।
আকরামের স্ত্রী বন্যা বলেন, ৮ আগস্ট সকালে ফোন দিয়ে আকরাম বলেছিল সমস্যা নেই, টেনশন করো না। ৯ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে আবার কল দিয়ে জানায় সে ঝামেলায় আছে, ঝামেলা মিটে গেলে আবার কথা বলবে। প্রায় ৫০ সেকেন্ড কথা হয়েছিল, এরপর আর খোঁজ মেলেনি।
তিনি আরও বলেন, আমার বড় ছেলের বয়স ৭ বছর, মেজো ছেলের ৪ বছর এবং আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র ১ বছর। এখন এদের দেখবে কে? স্বামীর নামে কিছু মামলা আছে, কিন্তু সেগুলো বিয়ের আগের। বিয়ের পর সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল, একজন গাড়িচালক ছাড়া সে আর কিছু নয়।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই, সীমান্তসূত্র ও স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত ৯ আগস্ট (শনিবার) গভীর রাতে আকরামসহ আটজন বাংলাদেশি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মেঘালয়ে প্রবেশ করেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার রোংদাংগাই গ্রামে গিয়ে এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা ও বাড়িঘরে হামলা চালান। ওই ঘটনায় স্থানীয়রা পাঁচ বাংলাদেশিকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আটককৃতরা হলেন- জামালপুরের মারুফুর রহমান (৩২), জামালপুর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম (২৫), নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন (৩০), কুমিল্লার মেহফুজ রহমান (৩৫) ও সুনামগঞ্জের মোবারক হোসেন (৩২)। তাদের কাছ থেকে একটি রিভলভার, তিনটি ওয়্যারলেস সেট, একটি ম্যাগাজিন ও পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং দুজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মুসা মিয়া বলেন, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ বুঝে পাই। পরে নেত্রকোণায় ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিয়ে শেরপুরের পথে রওনা দিয়েছি। মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে, কয়েকদিন খোলা অবস্থায় থাকায় পাশে দাঁড়ানোই কষ্টকর।
নেত্রকোণা কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, ৬ আগস্ট আকরাম বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। ১১ আগস্ট ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তিনি ভারতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। এরপর বিজিবি ও পুলিশের মাধ্যমে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে মরদেহ ফেরতের আবেদন জানানো হয়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই আজ বিএসএফ মরদেহ হস্তান্তর করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :