অবশেষে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়েছে। আইএমএফ-এর প্রধান দুটি শর্ত আংশিক বাস্তবায়ন করতে শেষপর্যন্ত সম্মত হয়েছে সরকার। শর্ত দুটি হচ্ছে, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার আরও নমনীয় করা (এতে ডলারের দাম বাড়বে এবং টাকার মান কমবে) এবং রাজস্ব আহরণ বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ব্যাপক সংস্কার।
শর্ত দুটি মেনে নেওয়ায় বাংলাদেশ আগামী মাসের মধ্যেই আইএমএফ-এর ঋণের দুটি কিস্তি বাবদ ১৩০ কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আইএমএফ-এর ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটি কিস্তিতে ১৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের চতুর্থ কিস্তি ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শর্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় ওই কিস্তি ছাড় করেনি। ওই সময়ে বলা হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে ছাড় করবে। পরে তা পিছিয়ে মার্চে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মার্চেও ছাড় করেনি। ঋণের শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনার বিষয়টি গড়ায় ওয়াশিংটনে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর বসন্তকালীন বৈঠকের সময় সাইডলাইনে আইএমএফ-এর সঙ্গে সরকারের দুই দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এতে কোনো সমঝোতা হয়নি। পরে অনলাইনে আরও দুই দফা বৈঠক হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। এ মাসেই আরও একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ বৈঠকে দুই পক্ষই কিছুটা ছাড় দেয়।
সূত্রমতে, আইএমএফ ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের বর্তমানে প্রচলিত ক্রলিং পেগ পদ্ধতি (একটি সীমার মধ্যে থেকে ডলারের দাম ওঠানামার সুযোগ) আরও শিথিল করার প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ এখনই বাড়ানোর শর্ত থেকে সরে এসে এনবিআর সংস্কারের প্রস্তাব দেয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে দুটি প্রস্তাবে সম্মত হয় বাংলাদেশ। ফলে বিষয়টি আইএমএফকে জানানো হয়। তারাও এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। ঋণের দুটি কিস্তি ছাড়ে সম্মত হয়। জুনের মধ্যেই আইএমএফ-এর নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ঋণের কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে সরকার এনবিআর-এ ব্যাপক সংস্কার এনেছে। এনবিআরকে ভেঙে দুটি সংস্থা করেছে। একটি কর নীতি প্রণয়ন করবে এবং অপরটি কর ব্যবস্থাপনা করবে। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছে সরকার। পাশাপাশি আইএমএফ-এর একটি শর্তও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বর্তমানে মধ্য দর ১১৯ টাকা। এর সঙ্গে আড়াই শতাংশ ওঠানামা করতে পারে। এ হিসাবে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় ওঠতে পারে। ওই দর নির্ধারণের কিছুদিনের মধ্যেই ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২২ টাকায় ওঠে। এখনো ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ডলারের দাম কমার সুযোগ থাকলেও কমেনি। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির মধ্য দরের সঙ্গে ওঠানামার হার আরও বাড়ানো হবে। এই হার ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি হলে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা ৭৬ পয়সা ওঠতে পারবে। নামলে ১১৪ টাকা ২৪ পয়সায় নামতে পারে। কিন্তু ডলারের দাম সাধারণত কমে না। এটি বাড়তেই থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে না। এটি নেওয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য। কারণ, আইএমএফ-এর ঋণ পেলে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ, তারা অর্থনীতির সব ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা দেখেই ঋণ দেয়। এই ঋণ পেতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণেও ইতিবাচক সাড়া মিলবে। এসব কারণেই সরকার ঋণের শর্ত বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। তবে বিনিময় হারে নমনীয়তা আনলেও ডলারের দাম খুব বেশি বাড়তে দেওয়া হবে না। কারণ, বাজারের ডলারের প্রবাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। ###
আপনার মতামত লিখুন :