ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোরের দুটি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে বিএনপি।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করে। সেখানে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল করে।
পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনগুলোর পুনর্নির্ধারিত সীমানা সম্পর্কে শুনানির তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৪ আগস্ট থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এই শুনানি শুরু হচ্ছে। এ তালিকায় যশোর-৩ (সদর) ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনসহ এক হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তির শুনানি করার কথা রয়েছে। দাবি-আপত্তির বিষয়ে শুনানি গ্রহণের পর পর্যালোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনার। এ সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে যশোর জেলা বিএনপি।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু দাবি করেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির সামনে স্পষ্ট করেছেন। নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আপামর জনসাধারণ ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে সংসদ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। ঠিক এমন মুহূর্তে একটি মহল দীর্ঘদিনের ইতিহাস ঐতিহ্যের বিচ্যুতি ঘটিয়ে যশোরের সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করছে। জেলা বিএনপি সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের যেকোনো চেষ্টার বিরোধিতা করে। এর কোনো প্রয়োজন নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনের পর বর্তমান অবস্থার ওপর ভিত্তি করেই যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়েছে। শুধুমাত্র ২০০৮ সালের অনির্বাচিত সরকারের সময়ই এর ব্যত্যয় ঘটানো হয়। আবার সেই অবস্থায় ফেরানোর চক্রান্ত হচ্ছে। মূলত আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে এ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিবর্তন মেনে নেওয়া হবে না। এর বিপক্ষে বিএনপি রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে অবস্থান নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, মুনীর আহমেদ সিদ্দিকী, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমীর ফয়সাল, সদস্য সচিব রাজেদুর রহমান সাগর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে যশোর-৬ আসনের সীমানা পুনর্গঠনের জন্য গত ৬ আগস্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল।
ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার প্রস্তাবিত এলাকাটি উন্নয়ন বিচ্ছিন্ন। উক্ত এলাকাটি যশোর জেলার তিনটি সংসদীয় এলাকার মধ্যে রাখা হয়েছে। সুতরাং ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা সমাধান করে এই এলাকার মানুষের কাছে রাষ্ট্রের সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি। তিনি প্রস্তাবিত-৯০ যশোর-৬ আসনে অভয়নগর উপজেলা, মণিরামপুরের ৬টি ইউনিয়ন-ঢাকুরিয়া, হরিদাসকাটি, কুলটিয়া, দুর্বাডাঙ্গা, নেহালপুর ও মনোহরপুর এবং কেশবপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন-সুফলাকাটি, পাঁজিয়া ও গৌরিঘোনা অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেছেন।
একই দাবিতে চলতি বছরের ১৯ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর করা আবেদনে সুকৃতি কুমার মণ্ডল উল্লেখ করেছেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভয়নগর ও কেশবপুর উপজেলা নিয়ে ৯০-যশোর সংসদীয় আসন ছিল। আর বাঘারপাড়া ও সদরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে ৮৮-যশোর-৪ সংসদীয় আসন ছিল। সুতরাং নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্গঠনের ইতিহাস আছে। প্রস্তাবিত যশোর-৬ এলাকাটি নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল কেন্দ্রিক দৈনন্দিন জীবন পরিচালিত হয়। বর্তমানে অঞ্চলটি অপরিকল্পিতভাবে তিনটি নির্বাচনি এলাকা যশোর ৪, ৫ ও ৬ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তিনজন সংসদ সদস্য তিন দিকে টানাটানির কারণে এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান হয়নি ৩০ বছরেও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত যশোর-৬ আসন বাস্তবায়ন করতে হলে কেশবপুর উপজেলাকে যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। আর যশোর-৪ আসনে বাঘারপাড়ার সঙ্গে সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন সংযুক্ত করে সংসদীয় আসন করতে হবে। এতে যশোর-৩ (সদর) আসনের ৫টি ইউনিয়ন কেটে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :