নাটোরের বিএমএ ও বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলাম ত্রিভুজ প্রেমের কারণেই নিজের ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুল ইসলাম মিয়ার (২৬) হাতে খুন হয়েছেন।
শহরের মাদ্রাসা মোড়ে নিজের গড়া জনসেবা হাসপাতালের একজন সেবিকার প্রেমে পড়েন ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলাম। এর আগে থেকেই ওই সেবিকা ডাক্তারের ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে প্রেমে জড়িত ছিলেন। এর জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
বিষয়গুলো নিশ্চিত করে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নিহত চিকিৎসকের জনসেবা হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করেন।
এ সময় পুলিশ সুপার বলেছেন, ত্রিভুজ প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় গত ২৫ আগস্ট নিজের শয়ন কক্ষে ডা. আমিরুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুল ইসলাম ও সেই সেবিকাকে মারপিট করেন। পরে সেদিনই ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করেন।
বগুড়া জেলার ধনুট উপজেলার এলাচ ফকিরপাড়ার ইলিয়াস আকন্দের ছেলে আসাদুল ইসলাম সেদিনই নিজের বাড়ি চলে যান। পরে আসাদুল ইসলাম বগুড়া থেকে একটি কালো বোরকা ও দুটি ধারাল ছুরি কিনেন। নিজের কাছে চাবি থাকার সুবাদে ঘটনার রাতে আগে থেকেই তিনি চিকিৎসকের শয়ন কক্ষে গোপনে অবস্থান নিয়ে ছিলেন।
নিজের প্রেমিকার সঙ্গে ডা. আমিরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং সেটা জানাজানি হওয়ার পর আসাদুলকে তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষোভ থেকেই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আসাদুল স্বীকার করেছেন। দ্রুত আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন বলেও পুলিশকে নিশ্চিত করেছেন।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছুরি নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের সিংড়া উপজেলার শেরকোল নিঙ্গইন আইসিটি পার্ক এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আসাদুলের ব্যবহৃত বোরকাটি সিংড়ার আত্রাই নদীতে ফেলে দেওয়ায় এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নাটোর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আসরের নামাজের পর নাটোর পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় গাড়িখানা কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ ও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিনসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
অপরদিকে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতেই নিহত চিকিৎসক ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলামের সহধর্মিণী তাসমিন সুলতানা বাদী হয়ে নাটোর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তার স্বামীর গলা ও পুরুষাঙ্গ কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। মামলায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করা হয়েছে।
নাটোর থানার এসআই জামাল উদ্দিনকে এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতালের তিন সেবিকাসহ ৫ জনকে আটক করে। পরে একপর্যায়ে নাটোর শহর থেকে মূল অভিযুক্ত নিহত চিকিৎসকের ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুল ইসলামকেও আটক করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, আপাতত এ মামলায় একমাত্র আসাদুল ইসলামকেই গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ ডা. আমিরুল ইসলামের নিজের গড়া জনসেবা হাসপাতালের তৃতীয় তলার শয়ন কক্ষ থেকে তার গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :