নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে র্যাব-১১ এর পৃথক দুটি অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী শুটার মাসুদ (২৮) ও নৌ-ডাকাত আক্তার সরকারকে (৫০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে বিদেশি পিস্তল, গুলি, মাদকদ্রব্য, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিশেষ ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও বিভিন্ন সরঞ্জাম।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব-১১-এর সদর দপ্তর, আদমজীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন এসব তথ্য জানান।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৭টা ৩০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পেরাব এলাকা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী শুটার মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ছয় রাউন্ড গুলি, দুই বোতল বিদেশি মদ এবং ৫৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, শুটার মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও সোনারগাঁও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করত এবং চাঁদাবাজি, লুটপাট ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করত।
গত ২৭ জুলাই সোনারগাঁও থানার নোয়াদ্দা বাবুবাজার এলাকায় রাকিব (২৫) নামের এক কাপড় ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, শুটার মাসুদ গুলি করে রাকিবকে হত্যার পর অস্ত্র হাতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছে।
র্যাবের তথ্যমতে, মাসুদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নাশকতা, ডাকাতি ও মাদকসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় মোট সাতটি মামলা রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত ৩ সেপ্টেম্বর একই গ্রুপের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী শুটার রিয়াজকে সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার তিতাস থানা এলাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় জড়িত মেঘনা নদীর শীর্ষ নৌ-ডাকাত আক্তার সরকারকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার পুলিশ ও গুয়াগাছিয়া অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা মেঘনা নদীতে অভিযানে গেলে চার থেকে পাঁচটি হাইস্পিড ট্রলারে করে ৪০–৫০ জনের একটি ডাকাতদল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। পরে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, নয়ন, পিয়াস ও আক্তার সরকারের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় নদীপথে চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলন ও ডাকাতি চলছিল। তাদের ভয়ে শতাধিক পরিবার এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আক্তার সরকারের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গভীর রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার মোল্লাকান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলায় ব্যবহৃত একটি বিশেষ ইঞ্জিনচালিত নৌকা, পাঁচটি পিতলের নৌকার পাখা, দুটি চুম্বক, একটি বাইনোকুলার, একটি ছোরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, আক্তার সরকারের বিরুদ্ধে মোট ২৭টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে- ৪টি হত্যা, ১৪টি হত্যাচেষ্টা, ২টি ডাকাতি, ১টি অপহরণ, ১টি চাঁদাবাজি, ৪টি বিস্ফোরক আইনে মামলা এবং ১টি মাদক মামলা।
এর আগে, ২৮ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর র্যাব-১১ এর দুটি পৃথক অভিযানে একই হামলার ঘটনায় আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামিকে আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শুটার মাসুদ ও আক্তার সরকারের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে। পাশাপাশি মেঘনা নদীতে ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :