ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২

মাথা থেকে পিআর চলে গেছে, তারা এখন গণভোট নিয়ে এসেছেন

দৈনিক নতুন সংবাদ নভেম্বর ৮, ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম মাথা থেকে পিআর চলে গেছে, তারা এখন গণভোট নিয়ে এসেছেন

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, ইসরাইলে যে পিআর পদ্ধতি আছে উনারা (জামায়াতে ইসলামী) সেই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। আমি জানি না কেন তারা ইসরাইলের ফলোয়ার হয়ে গেলেন। তাদের মাথা থেকে এখন পিআর চলে গেছে। তারা এখন গণভোট নিয়ে এসেছেন। পিআর পদ্ধতি যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে উপযোগী না -এটা যে তারা বুঝতে পেরেছেন, এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। 

 

শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুড়া ইউনিয়নের লেংগুড়া স্কুল ও কলেজ মাঠে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আয়োজিত মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব বলেন।

কায়সার কামাল বলেন, তারা যে পিআর পদ্ধতি দাবি করছেন, আমার মনে হয় তাদের উচ্চপর্যায়ের নেতাকর্মী ছাড়া আর কেউ এই বিষয়টা সম্পর্কে অবগত। অতএব আমার মনে হয় না বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে পিআর উপযোগী। সেই ১৬৮৮ সালে লন্ডনে গোল্ডেন রেভুলেশনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই লন্ডনে এখন পর্যন্ত পিআর নেই, অস্ট্রেলিয়াতে পিআর নেই, কানাডাতে নেই, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সেখানেও পিআর নেই। 

তিনি বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য আত্মহুতি দিয়েছে, গুম হয়েছে, ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে দেড় মাসে প্রায় দুই হাজার মানুষ আত্মহুতি দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। একটাই কারণ এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, সবার ওপরে সংসদ নির্বাচন।

কায়সার কামাল বলেন, সংসদ নির্বাচনকে ত্বরান্বিত করার জন্য সব দল একসাথে কাজ করবে বলে বিশ্বাস করি। আর গণভোটের বিষয়ে যদি বলেন তাহলে আমি বলব নির্বাচন করতে গেলে বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ, বিশাল পরিমাণ একটি খরচের বিষয় থাকে। তাছাড়া ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে, এখন গণভোটের সময়ও নেই। এজন্য আমাদের দল থেকে দাবি জানিয়েছে গণভোট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে হোক আলাদা দুই ব্যালট পেপারে। আমরা আশা করছি বন্ধুপ্রতিম প্রত্যেকটা রাজনৈতিক সংগঠন এই দাবির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করবে। নির্বাচনের জন্য গোটা জাতি, গোটা দেশ এমনকি জামায়াতে ইসলামী পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। তারা এক বছর আগে তাদের প্রার্থী নির্বাচিত করে রেখেছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যেমন আমরা একসাথে ছিলাম, তেমনি আমরা নির্বাচনের জন্য একসাথে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।

এর আগে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া মেডিকেল ক্যাম্পে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছেন কলমাকান্দা উপজেলার প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসা প্রত্যাশী জনসাধারণ। যেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করেছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ৮০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

এই মেডিকেল ক্যাম্পে চক্ষু, অর্থোপেডিক্স, ‌নেফ্রোলজি, নাক কান গলা, কার্ডিওলজি, মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, বক্ষব্যাধি, শিশু রোগ, গাইনি ও অবস বিভাগসহ মোট ১১টি বুথে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবা পেয়ে উচ্ছ্বাসিত ও আনন্দিত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত রোগী ও তাদের স্বজনরা। তারা বলছেন, এখানে চিকিৎসা নিতে পেরে তারা উপকৃত হয়েছেন। কারণ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে জেলা শহর বা বিভাগীয় শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য এবং খরচের একটি বিষয় থাকে। 

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব আহমদ আলী বলেন, এখন বয়স হয়েছে যার কারণে চিকিৎসা নিতে দূরে যেতে পারি না। এমনিতেই আমার কোমরের সমস্যা, ওঠা-বসা করতে পারি না। তার ওপর যদি এত দূরের রাস্তা যাওয়া লাগে তাহলে আরও অসুস্থ হয়ে যাই। এজন্য এত দূরে চিকিৎসা নিতে যাই না। এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় আমাদের ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ উনার এই মেডিকেল ক্যাম্পের কারণে আমি এখানে চিকিৎসা নিতে পেরেছি, ওষুধ পেয়েছি। আশা করি এখন আগের থেকে একটু ভালো থাকতে পারব। আমি মন থেকে কায়সার কামালের জন্য দোয়া করি।

চিকিৎসা নিতে আসা আরেক আদিবাসী নারী পিপি রেমা বলেন, আমরা গরিব মানুষ পাহাড়ে থাকি, গায়ে গতরে খেটে ভাত খাই, চিকিৎসা করবো কেমনে। আমার তিন ছেলে। এক ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিলাম বউ ছেড়ে চলে গিয়েছে, এখন সে তার মতো থাকে। বাকি দুই ছেলেও ঠিকমতো আমার দেখাশোনা করে না। এখন নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হয়। কোনো রকম কাজকর্ম করে দিন আনি দিন খাই, চিকিৎসা করব কীভাবে। সারা জীবন কৃষিকাজ করে সংসার চালিয়ে বাচ্চাদের মানুষ করেছি, কিন্তু তারা এখন আমাকে খাবার দেয় না। বলতে গেলে এক রকম অসহায় জীবনযাপন করি। এখানে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি, তারা ওষুধ দিয়েছেন এবং নিয়ম কানুন বলে দিয়েছেন। 

Side banner