ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

গোয়ালন্দের অধিকাংশ মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষক এলাকা ছাড়া

দৈনিক নতুন সংবাদ | ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকাঃ সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৯:১৮ পিএম গোয়ালন্দের অধিকাংশ মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষক এলাকা ছাড়া

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ইমাম মেহেদী দাবিদার নুরাল পাগলের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হতাহত ও কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানোর ঘটনায় এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনমনে বিরাজ করেছে গ্রেফতার আতঙ্ক।

গ্রেফতার আতঙ্কে উপজেলার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। এমনকি বাজারের অনেক দোকানদার তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর মধ্যে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজবাড়ীর আদালতে কাজী অপু নামের এক যুবক পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাস্থল নুরাল পাগলের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও তার দরবার পরিদর্শনে আসেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ছিদ্দিকুর রহমান। তিনি নিরপরাধ সাধারণ জনগণকে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আশ্বস্ত করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোয়ালন্দ শহরের ফকির মহিউদ্দিন আনছার ক্লাব ময়দানে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। নুরাল পাগলের কাবাসদৃশ কবর ভেঙে নিচু করা ও তার দরবারে ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবিতে এ সমাবেশ ডাকা হয়।

সমাবেশকে সফল করতে উপজেলার প্রতিটি মসজিদের ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করে সমাবেশে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় ওই রাতে থানার এসআই সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার যেসব মসজিদের ইমামদের বাড়ি গোয়ালন্দের বাইরে ঘটনার পর তারা মসজিদ ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি অথবা সুবিধাজনক স্থানে চলে গেছেন। স্থানীয় ইমামদের মধ্যেও অধিকাংশ মসজিদ ও বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন।

ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির নেতারাও গ্রেফতার আতঙ্কে সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) জোহর নামাজে দৌলতদিয়া সাইনবোর্ড জামে মসজিদে দেখা যায় একজন সাধারণ মুসল্লি নামাজে ইমামতি করছেন।

নামাজ শেষে মুয়াজ্জিন আজিম খাঁ জানান, এখানকার ইমাম হাফেজ মো. মনিরুজ্জামান শুক্রবারের ঘটনার পর মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

একইভাবে ইদ্রিসিয়া ইসলামিয়া জামে মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল লতিফ শুক্রবারের পর তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে চলে গেছেন।

মাদ্রাসার সহকারী সুপার সাইদুর রহমান জানান, তিনি জোহরের নামাজে ইমামতি করেন। অন্যান্য ওয়াক্তে উপস্থিতভাবে একজনকে ইমাম নির্বাচিত করে নামাজ আদায় করা হচ্ছে।

গোয়ালন্দ বাজার বড় মসজিদের ইমাম ও উপজেলা ইমাম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ আবু সাইদ আত্মগোপনের কথা স্বীকার না করে মোবাইল ফোনে জানান, তার এক অসুস্থ আত্মীয় নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত রয়েছেন।

তিনি জানান, পুলিশের গাড়িতে অতর্কিতভাবে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক হামলা করে। আমারা সিনিয়ররা দৌড়ে গিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে নিজে খানিকটা আহত হই।

হাফেজ আবু সাইদ অভিযোগ করে বলেন, নুরাল পাগলের বাড়িতে এবং তার মরদেহের সঙ্গে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা পবিত্র ধর্ম ইসলাম সমর্থন করে না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও দায়ীদের শাস্তি দাবি করছি।

তিনি দাবি করেন, আমাদের উজানচর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ শরিফুল ইসলাম অত্যন্ত নিরীহ একজন মানুষ। কোনো ধরনের খারাপ কাজ তিনি করেননি বলে জানি; কিন্তু সোমবার সকাল ১০টার দিকে একদল লোক তার বাড়িতে গিয়ে তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এসেছে।

এদিকে গোয়ালন্দ বাজারের বেশ কিছু ব্যবসায়ীর দোকানপাট পর হতে বন্ধ থাকতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান, ন্যক্কারজনক ঘটনার পর গ্রেফতার আতঙ্কে আছি। কোনো ধরনের অন্যায় করিনি। তারপরও ভয় হয় কখন জানি কী হয়ে যায়।

দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আ. রশিদ জানান, স্থানীয় একটি মাদ্রাসার এক শিক্ষক তার বাসায় এসে তার ছেলেকে আরবি শিক্ষা দিতেন। শুক্রবারের পর থেকে তিনি আর আসছেন না। শুনলাম তিনি তার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নুরাল পাগলের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও দরবার পরিদর্শনে শেষে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ছিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে শুধুমাত্র তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতে যদি কেউ প্রশাসনে থাকে বা প্রশাসনের বাইরেও থাকে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, গণগ্রেফতার বলতে যা বোঝায় এখানে ব্যাপারটা কিন্তু সেটা হয়নি। আমাদের গ্রেফতার খুবই সীমিত। এ ধরনের ঘটনায় জনগণ ভাবতে পারে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হবে। ব্যাপারটা আসলে সেটা না।

তিনি আরও বলেন, একটি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হতে পারে আবার অশান্তিও হতে পারে। সমাবেশে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে; কিন্তু সবাই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে না। নাশকতা সবাই করে না। আমরা সবকিছু নজরদারি করছি। সাধারণ নিরীহ লোকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল, গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম।

Side banner