ঝড়ের সময় বিছানায় ছিলেন লাল মিয়া। হঠাৎ ভয়ার্ত শব্দে চোখ খুলতেই দেখেন টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। মুহূর্তেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় ঘরবাড়ি। এখন খোলা আকাশের নিচেই কাটছে পরিবার নিয়ে তার দিনরাত।
৪০ বছর বয়সী লাল মিয়া স্থানীয় লুৎফর রহমানের ছেলে। তার দুটি সন্তান, একজন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে লাল মিয়া কোনো কাজ করতে পারেন না। সংসার চলে তার স্ত্রী আনুফা বেগমের আয়ে। আনুফা স্থানীয় একটি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করেন। কিন্তু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে কাজেও যেতে পারছেন না তিনি।
রোববার (১২ অক্টোবর) সকালে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম বানিয়াপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা টিনের ঘরের পাশে বসে আছেন লাল মিয়া। তার পাশে স্ত্রী ও দুই সন্তান। ঘরের টিন ছেঁড়া, বিছানায় ধুলোবালি জমে আছে। ভাঙা চেয়ার-টেবিল পড়ে আছে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে।
লাল মিয়া বলেন, আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। কিছুই করতে পারি না। ঝড়ে ঘরটা একেবারে উড়ে গেছে। এখন থাকার জায়গা নাই। টাকার অভাবে ঘর মেরামত করতে পারছি না। সাত দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে আছি। কেউ যদি সাহায্য করে তাহলে ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারবো।
লাল মিয়ার স্ত্রী আনুফা বেগম বলেন, রাতে ঘুমাতে পারি না। কুয়াশায় শরীর ভিজে যায়, বাচ্চারা ঠান্ডায় কাঁপে। কাপড়চোপড়, বইখাতা সব নষ্ট হয়ে গেছে। বাচ্চাটা স্কুলেও যেতে পারছে না। সমাজের কেউ পাশে দাঁড়ালে ঘরটা ঠিক করে আবার থাকতে পারব।
স্থানীয় বাসিন্দা মিস্টার রহমান বলেন, লাল মিয়া আমাদের গ্রামের সবচেয়ে গরিব মানুষ। তিনি প্রতিবন্ধী, কাজ করতে পারেন না। হঠাৎ ঝড়ে তার টিনের ঘরটা পুরো উড়ে গেছে। এখন পরিবারটা খোলা আকাশের নিচে। প্রশাসন যদি সহায়তা করে, তাহলে ওরা ঘরটা ঠিক করতে পারবে।
গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জোনাব আলী বলেন, বিষয়টি জানি। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরিবারটিকে সহায়তা করার চেষ্টা করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। লাল মিয়ার পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ অক্টোবর সকালে জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম বানিয়াপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে কয়েক মিনিটের তীব্র ঝড় বয়ে যায়। এতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ধান, কলা, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে এবং কিছু দোকানপাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কয়েকটি গ্রামে।
আপনার মতামত লিখুন :