ঢাকা রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমাতে ১৮১৮ কোটির নতুন প্রকল্প

দৈনিক নতুন সংবাদ | ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকাঃ আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১১:১৬ এএম বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমাতে ১৮১৮ কোটির নতুন প্রকল্প

দেশে বছরের পর বছর বিদ্যুতের সিস্টেম লস বা ব্যবস্থাপনাগত লোকসান যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ থেকে উত্তরণে সরকার নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে, যার মাধ্যমে ১৪ জেলার ২০ উপজেলার ২৫টি আউটডোর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে প্রথাগত লোকসান কমানো হবে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) তত্ত্বাবধানে চার বছরমেয়াদি হিসেবে বাস্তবায়িত হবে এবং এর মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

প্রকল্পটি অনুমোদনোর জন্য রোববার (১৭ আগস্ট) পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। তিনি আরও বলেন, এবারের একনেক সভায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র আধুনিকায়ন ও বিতরণ ব্যবস্থায় সিস্টেম লস কমানোর প্রকল্প ছাড়াও মোট ১০টি প্রকল্প উঠছে। এর মধ্যে ৬টি নতুন এবং ৪টি সংশোধিত। এগুলোর মধ্যে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি, শিল্প ও শক্তি বিভাগের দুটি, আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের তিনটি এবং ভৌত-অবকাঠামো বিভাগের চারটি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

একনেক সভায় সম্ভাব্য উপস্থাপিত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকারের প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে, তবে প্রকল্প নেওয়ার আগে অবশ্যই যথাযথ যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয়গুলো নেওয়া উচিত।

সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র আধুনিকায়ন ও বিতরণ ব্যবস্থায় সিস্টেম লস কমানোর এ নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার দেবে ৪৯৭ কোটি, বৈদেশিক ঋণ আসবে ১ হাজার ৮০ কোটি এবং নিজস্ব সংস্থার অর্থায়ন হবে ২৫৭ কোটি টাকা। ২০২৯ সালের জুন নাগাদ প্রকল্প শেষ হলে উপকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়বে ৪১৮ এমভিএ। পাশাপাশি বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সিস্টেম লস বর্তমান ৬.৬২ শতাংশ থেকে কমে ৫.৮২ শতাংশে নামবে।

এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন করা গেলে এর সুফল পাবেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।

একনেক সভায় এ ছাড়া চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রকল্পও উঠবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এ প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১ কোটি টাকা। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, এবার চতুর্থবারের মতো ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে।

কৃষি খাতের উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ‘আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি টাকা। পাঁচ বছরমেয়াদি এ প্রকল্প চলবে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

শিক্ষা খাতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ৫১৯ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প একনেকে উঠছে। আর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপনের সংশোধিত প্রকল্প তুলবে। ব্যয় ৪৫৬ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৮১৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে।

এ ছাড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আজিমপুর সরকারি কলোনিতে বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ৭৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দুটি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণে ৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উঠছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ ঢাকার পরিবেশবান্ধব পানি সরবরাহ প্রকল্পের ব্যয়সহ মেয়াদ তৃতীয়বার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২৮২৮ কোটি টাকা, মেয়াদ বাড়বে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। পাশাপাশি বান্দরবান পৌরসভা ও তিন উপজেলা সদর এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

Side banner