শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীকে সামনে রেখে ১৫ আগস্ট ঘিরে গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া নাশকতার আশঙ্কা মোকাবিলায় কঠোর ও সর্বাত্মক নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের সাতটি জেলা এবং দুটি মহানগর এলাকায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন সরকারের উচ্চপর্যায় এবং পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এরই অংশ হিসাবে বুধবার বিকালে পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ সভা হয়। আইজিপি বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন সাত জেলার এসপি, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং সব রেঞ্জের ডিআইজি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার সভায় যুক্ত না হলেও তার পক্ষে ছিলেন একজন অতিরিক্ত কমিশনার। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, যেসব স্থানে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেগুলো হলো—ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা। এসব জেলার এসপি এবং মেট্রোপলিটন কশিনারকে বিশেষ নির্দেশনা দেন আইজিপি।
বলা হয়, কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। ব্যাপক ধরপাকড় চালাতে হবে। এমনভাবে নিরাপত্তা ছক আঁকতে হবে, যাতে কেউ কোনো ধরনের অপকর্মের সুযোগ না পায়। অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান আরও জোরদার করার পাশাপাশি শিক্ষক অন্দোলনকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার নির্দেশ দেন আইজিপি। দাবি আদায়ের আন্দোলনের নামে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ না পান।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন ডিআইজি বলেন, সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। শিক্ষকদের সমাবেশের বিষয়টিও উঠে এসেছে আলোচনায়। নিরাপত্তার প্রশ্নে গোপালগঞ্জসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা, চট্টগ্রাম এবং লালমনিরহাট জেলাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসব এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে বলা হয়েছে। এ কারণে ব্রিফিংয়ে সব জেলার এসপিকে যুক্ত না করে কেবল সাত জেলার এসপিকে যুক্ত করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া একজন এসপি বলেন, কোনো মামলার আসামি যেন গ্রেফতারের বাইরে না থাকে, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। ১৫ আগস্ট ঘিরে কোথায়, কীভাবে ফোর্স মোতায়েন করা হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। ওয়ারেন্টভুক্ত সব আসামিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। কোন এসপি এবং কোন মেট্রেপলিটন কমিশনার ইতোমধ্যে কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন, সে বিষয়টিও অবগত করা হয় আইজিপিকে।
সভায় জানানো হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র লুট হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৩টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এছাড়া গোলাবারুদ লুট হয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২ রাউন্ড। লুট হওয়া ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০ রাউন্ড গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি। দ্রুত এগুলো উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সভায় আর কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে ওই এসপি বলেন, পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। এই নিয়োগ যাতে যথানিয়মে হয়, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি। কেউ যেন দালাল বা প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন, এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে বলেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :