ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২

রোহিঙ্গা সার্ভার ইসির হাতে এলো না কেন, আটকে আছে কোথায়?

দৈনিক নতুন সংবাদ | ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকাঃ আগস্ট ২১, ২০২৫, ১১:২৩ এএম রোহিঙ্গা সার্ভার ইসির হাতে এলো না কেন, আটকে আছে কোথায়?

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গারা এদেশে এসেছে। সবমিলিয়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক কক্সবাজারে অবস্থান করছে। বিশাল এই জনগোষ্ঠী নিয়ে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। এই রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এদেশের নাগরিকদের সঙ্গে মিশে জাতীয় পরিচয়পত্র-এনআইডি পাওয়ার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা এনআইডি পেয়েও গেছে। 

এই অবস্থায় তাদের রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাওয়া ঠেকাতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কাছে থাকা ডাটাবেইজ ব্যবহার করতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যকার টানাপোড়েনের কারণে তা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ইসির কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) রোহিঙ্গা সার্ভার দেওয়ার জন্য সব কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। শুধু হস্তান্তর বাকি ছিল। তবে বাঁধ সাধে আইসিটি মন্ত্রণালয়। তারা এই সার্ভার ব্যবহারের অনুমতি দিতে সম্মত হয়নি।

ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তথ্যভাণ্ডার ইসি থেকে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে একাধিকবার চেষ্টা হয়েছে। এ নিয়ে আন্দোলনও করেছেন ইসি কর্মকর্তারা। পরে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ইউএনএইচসিআর-এর রোহিঙ্গা সার্ভার ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় ইসি। সার্ভার পেতে সরকার ও ইউএইচসিআর-এর প্রতিনিধির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সংস্থাটি। এরপর সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর হঠাৎ আইসিটি মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের সার্ভার নিজের কাছে রাখার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। যার ফলে এ কার্যক্রম আর আলোর মুখ দেখেনি। 

গত ১৯ মার্চ ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসির পক্ষ থেকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের আশ্রয় থাকা ১০ লাখ রোহিঙ্গার ডেটা এনআইডি কার্যক্রমে ব্যবহার করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ দিতে এবং নতুন করে যাতে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গারা অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেজন্যে ইউএনএইচসিআর-এর সার্ভার ব্যবহারের এক্সেস থাকবে সংস্থাটির এনআইডি বিভাগের কাছে। এ কার্যক্রমে রোহিঙ্গাদের এই ডেটাবেজ রক্ষণাবেক্ষণে জনপ্রশাসন (মফা), নির্বাচন কমিশন এবং ইউএনএইচসিআর একসঙ্গে কাজ করবে। তবে ডেটাবেজ থাকবে ইসির হাতে।

রোহিঙ্গাদের সার্ভারের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের সার্ভারের যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা দেখে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) রোহিঙ্গাদের সার্ভার আমাদের ব্যবহার করতে দিতে চেয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সে সার্ভার আমাদের আর দেওয়া হয়নি।’

এটি প্রায় চূড়ান্ত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন হলো না, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভগের মহাপরিচালক শাহ্ আসিফ রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘পাওয়া গেল না এটা চূড়ান্ত খবর নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য একটি টাইমলাইন ফিক্সড করা হচ্ছে যে, আমাদের কোন কমিটি করবে, না করবে। এগুলোর টেকনিক্যাল বিষয় আছে, কনক্লুশান ড্রো’র সময় এখনো আসেনি। কাজ শেষ হলে আপনারা জানতে পারবেন।’

রোহিঙ্গাদের সার্ভার ইসির রাখার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের চিঠির কারণে সেটা হয়নি। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এজন্য বলছি এটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি যে, কে অথরিটি হবে, কাকে রাখা হবে, এটার ক্যাপাসিটি, এটার অনেক কিছু এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে আছে। যখন এটা কমপ্লিট হবে তখন ইউএনএইচসিআর আমাদের ডাটাটা দেবে।’

ইসির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের সার্ভার ব্যবহারে ইউএনএইচসিআর সঙ্গে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে, শুধু হস্তান্তর বাকি ছিল, তাহলে হঠাৎ করে এতে ধীরগতি আসার কারণ কী। এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভগের মহাপরিচালক বলেন, ‘সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলতে পারবেন। চূড়ান্ত হলে কোথায় ডাটাটা থাকবে, কোন এজেন্সি করবে, সব তথ্য আপনারা পেয়ে যাবেন।’

Side banner