রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির পরিবারের কাছ থেকে চাঁদাবাজির মাসখানেক আগেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদ আরেক এমপির কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি দল সাবেক এমপি আব্দুল কালাম আজাদের অফিসে হামলা চালিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার চেক নিয়ে যায়।
পুলিশ ও সাবেক এমপি আব্দুল কালাম আজাদের তথ্যানুসারে, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় রিয়াদের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক আজাদের বলে জানা গেছে। তিনি নবম জাতীয় সংসদে রংপুর-৬ আসনের এমপি ছিলেন। সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার
বিষয়টি নিয়ে আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২৬ জুন রিয়াদের নেতৃত্বে ১০–১২ জনের একটি দল তার অফিসে ঢুকে তাকে হুমকি দেয়।' 'তারা বলে, আপনি নিজে থানায় যাবেন, না আমরা নিয়ে যাব? তারপর তারা বলে, টাকা দেবেন, না বাইরে যে ২০০ লোক আছে তাদের জুতার বাড়ি, চড়-থাপ্পড় খাবেন?' 'যেহেতু আমার কাছে নগদ টাকা ছিল না, তারা আমার মোবাইল ফোন ও প্রায় ৫ কোটি টাকার চেক নিয়ে যায়', বলেন তিনি।
আজাদ আরও বলেন, 'তারা আমাকে শেখ হাসিনার দোসর উল্লেখ করে চাঁদা দাবি করে হুমকি দেয়।' তবে পরে তার মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বিধায় আজাদ আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা রংপুর-৬ আসন ছেড়ে দেওয়ার পর উপনির্বাচনে আজাদ এমপি নির্বাচিত হন।
এর আগে, আজ বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, রিয়াদের বাসা থেকে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রিয়াদ ও তার সহযোগীরা আর কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেছে কি না পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।'
গত ২৬ জুলাই গুলশান এলাকায় আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়।এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং রিয়াদসহ চারজন বর্তমানে সাত দিনের রিমান্ডে।
রিমান্ডে থাকা অন্য তিনজন হলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না (২৪), সদস্য সাকাদাউন সিয়াম (২২) ও সাদাব (২১)।
এ ঘটনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর অভিযোগ করেন, গত ১৭ জুলাই অভিযুক্তরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য পরিচয়ে তাদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। শাম্মী আহমেদ বাসায় না থাকায় তার স্বামীর কাছে চাঁদা চাওয়া হয়।
'আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে অপবাদ দেয় এবং চাপ দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আমি রিয়াদকে ১০ লাখ টাকা দিই।'
জাফর আরও জানান, গত ১৯ জুলাই তারা আবার বাসায় এসে দরজায় আঘাত করে, তবে তিনি পুলিশকে জানালে তারা চলে যায়।
'গত ২৬ জুলাই রিয়াদ ও অন্যরা আবার আমাকে খুঁজতে আসে। আমি বাসায় ছিলাম না, তবে নিরাপত্তারক্ষীরা বিষয়টি আমাকে জানায়। তারা বাকি ৪০ লাখ টাকা দাবি করে এবং অস্বীকৃতি জানালে আমাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি আবার পুলিশে ফোন দিই এবং পাঁচজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে আরেক অভিযুক্ত কাজী গৌরব পালিয়ে যায়', বলেন তিনি। ###
আপনার মতামত লিখুন :