ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

কর্নিয়ার অপেক্ষায় তিন হাজার মানুষ

দৈনিক নতুন সংবাদ | ডেস্ক রিপোর্ট : ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ০৪:৩৮ এএম কর্নিয়ার অপেক্ষায় তিন হাজার মানুষ

মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে কাজ করছে স্বাস্থ্যখাতের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সন্ধানী’। দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতায় ভোগা অন্তত ৬ হাজার জনের মতো লোক চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের (চোখ সংযোজন) জন্য সংগঠনটির তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার জনের জন্য এখনও কর্নিয়া পাওয়া যায়নি, ফলে তারা চিরতরে অন্ধত্বের ঝুঁকি নিয়ে অপেক্ষমাণ রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ( ২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত মরণোত্তর চক্ষুদানে উৎসাহিতকরণ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, একজন মানুষের অন্ধত্ব নানা কারণে হতে পারে। তার মধ্যে কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব হলে এর সংযোজন করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা যায়। এ ক্ষেত্রে সংযোজন ছাড়া পথ নেই। বিশ্বে অন্তত ২.২ বিলিয়ন মানুষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪.২ মিলিয়ন মানুষের কর্নিয়ার অস্পষ্টতা রয়েছে।

সেমিনারে বলা হয়, বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বে ভুগছেন, যারা তাদের চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করলেই দৃষ্টি ফিরে পাবেন। তবে বাংলাদেশে মানুষের মাঝে চক্ষু দান করার প্রবণতা নেই বললেই চলে। বিদেশ থেকে আমদানি করে অন্ধ মানুষের চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। সন্ধানীর মাধ্যমে অল্প কিছু সংখ্যক কর্নিয়া পাওয়া যায়। যা প্রয়োজনের তুলনা নিতান্তই অপ্রতুল। সাধারণ মানুষের মধ্যে কর্নিয়া দানের উৎসাহ সৃষ্টি করতে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

বক্তারা বলেন, মৃত্যুর পর একজন মানুষ চোখের ছোট একটি অংশ (১২ এমএম) কর্নিয়া দানের মাধ্যমে একজন অন্ধ মানুষের চোখের দৃষ্টি দান করা সম্ভব। এর মাধ্যমে মৃত্যুর পরেও একজন মানুষ অন্ধ মানুষের জীবনব্যাপী চোখের আলো হয়ে থাকতে পারেন। কর্নিয়া দান করলে মৃত্যুর পর চেহারার কোনো বিকৃতি ঘটে না। ধর্মীয়ভাবে এ বিষয়ে কোন নিষেধ নেই। ইরানের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশেও সবাই মৃত্যুর পর চক্ষু দানের অঙ্গীকার জীবিত থাকা অবস্থাতেই করে থাকেন। কর্নিয়া দান করা, রক্তদান ও কিডনি দান করার থেকেও সহজ একটি প্রক্রিয়া।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বহুদিন থেকে আমি সন্ধানীর সঙ্গে জড়িত। আমি সন্ধানীর প্রথম চক্ষু উত্তোলন করেছি। ৩৮ বছরে ৪ হাজার চক্ষুদান করার সুযোগ পেয়েছে সন্ধানী। ধর্মভীরু এদেশে এসব পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, সন্ধ্যা-নীসহ চক্ষু দানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের আগামী ৫ বছরের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। আমরা ঠিক কতটি চক্ষুদান করতে পারব তা নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। মরণোত্তর চক্ষুদানের বিষয়ে ভারত শ্রীলঙ্কা নেপালের সঙ্গে কাজ করে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে হবে।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে কৃষকদের কর্নিয়ায় রোগ সংখ্যা একটু কমেছে। ধান ও পাট কাটার সময় কৃষকদের চোখে চশমা পরতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চক্ষু পরিষ্কার করার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। কানের মতো করে চক্ষু পরীক্ষা করা যাবে না। টিস্যু দিয়ে চক্ষু পরিষ্কার করার সময় চক্ষুতে আঘাত লাগার কারণে অন্ধ হয়ে যাবে। এটি ট্রমাজনিত অন্ধত্ব।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন অফথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওএসবি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. একেএমএ মুক্তাদির। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সন্ধানী ন্যাশনাল আই ডোনেশন সোসাইটি এবং সন্ধানী ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাংক, বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. তোসাদ্দেক হোসাইন সিদ্দিক। 

সভাপতিত্ব করেন বিসিআরএসর সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল কাদের। সেমিনারে হাউ টু ইনভলব দ্যা হোল নেশন ইন আই ডোনেশন-আওয়ার রেসপন্সসিবিলিটি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভান্সমেন্ট ইন ক্যারাটোপ্লাস্টি: নিউ ইনসাইটস শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. শাফি খান এবং ডা. মো. জয়নাল ইসলাম সন্ধানী-দি টর্চ বেয়ারার অব আই ব্যাংকিং ইন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল্লাহ, অধ্যাপক সারোয়ার আলম, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এ হাসান। ###

Side banner