ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২

দেশের সব হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগের দাবি

দৈনিক নতুন সংবাদ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম দেশের সব হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগের দাবি

দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের নেতারা। 

 

তারা বলেন, ওষুধ ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট না থাকায় দেশে প্রতিনিয়ত ওষুধের ভুল ব্যবহার, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এবং ওষুধজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়া (এডিআর) বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরের ওয়াটারফল কনভেনশন হলে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উপলক্ষ্যে ফোরাম আয়োজিত র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 

সংগঠনের সভাপতি মো. আজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান তানভীর।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন প্রফেসর ডা. মো. সেলিম রেজা, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আকতার হোসেন, ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশের উপপরিচালক মো. আসিফ হাসান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. আমিরুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. হারুন-অর-রশিদসহ ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে এখনো হাসপাতাল ও কমিউনিটি ফার্মেসি কার্যক্রম চালু হয়নি। ফলে রোগীরা একদিকে ফার্মাসিস্টের সঠিক পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহারে রেজিস্ট্যান্স ভয়াবহ আকার নিচ্ছে, যা শিগগির প্রতিরোধ করা না গেলে জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

ফার্মাসিস্টস ফোরামের নেতারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও আন্তর্জাতিক ফার্মাসি ফেডারেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি হাসপাতালে প্রতি ২৫ শয্যার বিপরীতে একজন ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ দেশের সরকারি হাসপাতালে একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টও নেই। জাতীয় ওষুধনীতি ২০১৬ অনুযায়ী হাসপাতাল ফার্মেসি চালুর নির্দেশনা দেওয়া হলেও দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সংগঠনের সভাপতি মো. আজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ফার্মাসিস্ট শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত। তাদের বেতন কাঠামো উন্নয়ন ও জীবনমানের উন্নতির জন্য ওষুধ শিল্পের মালিকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ও হাসপাতাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহেদী হাসান তানভীর বলেন, ফার্মাসিস্টদের অধিকার আদায়ে ফোরাম ইতিমধ্যে নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার মানোন্নয়ন করতে হলে হাসপাতালগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ ও শিল্পে আধুনিক বেতন কাঠামো নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকার ও বেসরকারি খাতের মালিকদের প্রতি ছয় দফা দাবি জানানো হয়। 

দাবিগুলো হলো-

১. সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জরুরি ভিত্তিতে ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ।
২. সারাদেশে ২৪ ঘণ্টা খোলা হাসপাতাল ফার্মেসি চালু ও ড্রাগ অ্যান্ড থেরাপিউটিকস কমিটি গঠন।
৩. ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ফার্মাসিস্টদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড বেতন কাঠামো প্রবর্তন।
৪. সারাদেশে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে শক্তিশালী কমিউনিটি ফার্মেসি নেটওয়ার্ক গঠন।
৫. প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে জেলা ও উপজেলায় ফার্মাসিস্ট প্রশাসক নিয়োগ।
৬. ফার্মাসিস্ট উপাধি কেবল গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের জন্য সংরক্ষণ ও ফার্মেসি শিক্ষায় আধুনিকায়ন।

বক্তারা আরও বলেন, ফার্মাসিস্ট ছাড়া স্বাস্থ্যচিন্তা সম্ভব নয়। 

তারা মনে করেন, দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন হবে, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার কমবে এবং রোগীরা নিরাপদ চিকিৎসা পাবেন।

Side banner