হৃদরোগ এখন পৃথিবীর এক নম্বর প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগ। অথচ জীবনধারার পরিবর্তন এবং সচেতনতার মাধ্যমে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই হৃদরোগ এবং স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায় যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আগামী দশ বছরে হৃদরোগজনিত মৃত্যু আরও বেড়ে যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে উপস্থিত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। এসময় তিনি বলেন, দেশে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আমাদের জীবনধারায় এমন কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ধূমপান, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ চর্বি ও লবণযুক্ত খাদ্য, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা- এই সব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আমরা যদি এখনই পদক্ষেপ না নিই, তবে আগামী দশ বছরে হৃদরোগজনিত মৃত্যু আরও বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, হৃদরোগ প্রতিরোধে শুধু চিকিৎসার ওপর নির্ভর করা যাবে না। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র- সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সচেতনতা তৈরি করতে হবে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, তামাক ও মদ্যপান কমাতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। আমরা চাই দেশের প্রতিটি মানুষ জানুক, হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য এবং প্রতিটি পদক্ষেপে জীবন বাঁচানো সম্ভব।
হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিক জানান, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সহায়তা করতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন গবেষণা, অ্যাডভোকেসি এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম সারাবছর পরিচালনা করছে। আমরা চাই মানুষ হৃদরোগ প্রতিরোধে সক্রিয় হোক।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর একটি হৃদরোগজনিত। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ স্টাডি ২০১৯ অনুযায়ী, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিরোধ সম্ভব। বিশেষ করে তামাক ব্যবহার বন্ধ, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-মহাসচিব নওশাদ হোসেন এবং পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক মো. ইউনুসুর রহমান আরও বলেন, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় প্রাথমিক হেলথ চেকআপ ও ক্যাম্প আয়োজন জরুরি।
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় দেড় শতাধিক চিকিৎসক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ফাউন্ডেশন বিনামূল্যে হৃদরোগ নির্ণয় ক্যাম্প, সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। রাজধানীর বাইরেও ৪৫টি অধভুক্ত সমিতি (অ্যাফিলিয়েটেড বডি) বিভিন্ন স্থানে দিবসটি উদযাপন করে। ফাউন্ডেশন জনগণকে সর্তক করে বলেছে, একটি স্পন্দনও উপেক্ষা করবেন না। প্রতিটি হৃদস্পন্দনই জীবন। এখনই পদক্ষেপ নিন, জীবন বাঁচান।
আপনার মতামত লিখুন :