বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার দাবিতে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেছে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে এসব দাবিতে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। একই সঙ্গে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ করবেন দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা। পাশাপাশি প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও শিক্ষকদের ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিসহ সব আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। তিনি বলেন, সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ ও চলমান কর্মবিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের ছেলেমেয়েরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েন না, তাই তাদের কোনো চিন্তাও নেই। আমরা দীর্ঘদিন বঞ্চিত। এভাবে আর নয়। এবার দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবেন শিক্ষকরা।
অনড় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার আগে যা ভাবতে বললেন নুর এর আগে গতকাল সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় তারা গত রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে আটক আন্দোলনকারীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন।
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতির ফলে সারা দেশের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এমনকি এ কারণে স্কুলগুলোয় টাইফয়েডের টিকা দেওয়া কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলোতে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে গত রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েন শিক্ষকরা। এরপর গত গতকাল সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। অন্যদিকে সারা দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তারা ইতিবাচক। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন তারা। অফিসের বাইরেও দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন। এ অবস্থায় ঢাকায় শিক্ষকদের আন্দোলনে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছেন তারা। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া পেতেন, যা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।
এদিকে, শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও ইনকিলাব মঞ্চ। দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং সরকারকে দ্রুত দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
শিক্ষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শিক্ষকরা যে চেষ্টা করেন, তা জাতির জন্য আমানতস্বরূপ। আজ যদি তাদের রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়, দাবি না মানা হয়; তাহলে ভবিষ্যতে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা কারও জন্য কল্যাণকর হবে না। আন্দোলন ঘিরে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, আপনাদের দাবি আমাদেরও দাবি।
খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, শিক্ষকদের যদি রাস্তায় নামতে হয়, পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হতে হয়; তা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী অবিলম্বে শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে ডাকসুর সংহতি: আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নেতারা। গতকাল রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানান তারা। সংহতি জানানো ডাকসু নেতাদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক মো. আসিফ আব্দুল্লাহ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য সর্বমিত্র চাকমা।
আপনার মতামত লিখুন :