Daily Natun Sangbad
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুরাবস্থায়ও ন্যাশনাল ব্যাংকে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ!

দৈনিক নতুন সংবাদ | নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ১২:০৬ এএম দুরাবস্থায়ও ন্যাশনাল ব্যাংকে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ!

দেশের সবচেয়ে বড় মূলধনী আর্থিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও ২০২২ সালে মুনাফা করতে পারেনি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। লোকসান করায় প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের আর্থিক বিবরণীও প্রকাশ্যে আনেনি। অথচ এই সংকটের মধ্যেও ব্যাংকটিতে ব্যাপক নিয়োগ চলছে। এসব নিয়োগকে ঘিরে ব্যাংকটির ভেতরে-বাহিরে এবং ব্যাংকখাতে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

কোনওরকম বাছ-বিচার ছাড়াই ইতোপূর্বে ট্রেইনি এসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) পর্যন্ত পদে নিয়োগ দিয়েছে ব্যাংকটি। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালন ব্যয় কমাচ্ছে, সেখানে গত চার মাসে ৩টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিডেট। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদ সংখ্যাও ছিল অনির্ধারিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যাংকটির সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান শেখ আকতার উদ্দিন আহমেদ সিন্ডিকেট তৈরি করে বেশকিছু প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, নিজেদের লোক নিয়োগ দেওয়ার সুবিধার্থে ব্যাংকটিতে নতুন-নতুন বিভাগও খুলেছেন তারা। এমনকি পরীক্ষার মাধ্যমে যেসব নিয়োগ হয়েছে- সেগুলো নিয়েও বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ব্যাংক খাতে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনগুলো ঘেটে দেখা গেছে, ব্যাংকটি বর্তমানে মারাত্মক দুরাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মূলত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নৈতিক অদক্ষতা ও ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে ২০২২ সালে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বাড়লেও উল্টো লোকসানে গেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যবসা ও রিকভারিতে মনোযোগ না দিয়ে উল্টো উচ্চবেতনে বিপুল নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি করার কারণে বড় লোকসানে গেছে ব্যাংকটি।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পরিচালনা পর্ষদের অগোচরেই মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান সদ্য বিদায়ী এমডিকে সঙ্গে নিয়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। অথচ গত ২৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোকে পরিচালন ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিয়েছিল। এমনকি ওই সার্কুলারে এটাও বলা হয়েছিল, সংকোচনের মাধ্যমে সাশ্রয় হওয়া অর্থ অন্য কোন খাতেও ব্যয় করা যাবে না। মূলত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের ব্যয় সংকোচনের প্রক্রিয়া হিসেবেই ব্যাংক খাতে ব্যয় সংকোচনের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে দেশের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে নিজস্ব স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেট।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক নিট লোকসান করেছে ৩৫৭ কোটি টাকা। অথচ ২০২১ সালের একই সময়ে ১৩৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি। আর ২০২০ সালে ৯ মাসে নিট মুনাফা করেছিল ৩৪৮ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বছর শেষে ব্যাংকটির লোকসানের পরিমাণ আরও বেড়েছে। যে কারণে বছরের শেষ কার্যদিবসে সকল ব্যাংক মৌখিকভাবে মুনাফার হিসাব জানালেও এখন পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংক এই হিসাব প্রকাশ করেনি। এমনকি চলতি বছরের ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ব্যাংকটির ম্যানেজার্স কনফারেন্সে কয়েকজন ম্যানেজার মুনাফার হিসাব জানতে চাইলেও বিষয়টি এড়িয়ে যান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ২৪৮ কোটি টাকা এবং এর আগের বছরের মুনাফা ছিল ৯২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকটির ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ ঋণই খেলাপি। এদিকে ব্যাংকটি তারল্য-সংকটেও পড়েছে। অনেক শাখায় আমানত কমেছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আমানতের বিপরীতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ এসএলআর (বিধিবদ্ধ জমা) জমা রাখতে পারছে না। এ জন্য প্রতিনিয়ত জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এরপরও ব্যাংকটির আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতিতে মনোযোগ না দিয়ে মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে নতুন-নতুন নিয়োগে মনোযোগ দিতে দেখা গেছে সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। যে কারণে ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আর্থিক সূচক আরও শোচনীয় অবস্থায় গেছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেও গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে ৩টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ব্যাংকটি। গত ২৭ অক্টোবর এভিপি, এসএভিপি ও ভিপি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় ন্যাশনাল ব্যাংক। ২৯ নভেম্বরে জুনিয়র অফিসার থেকে এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় ব্যাংকটি। তিনটি বিজ্ঞপ্তিতেই পদ সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত নিজেদের মতো করে লোক নেওয়ার সুবিধার্থেই পদ সংখ্যা উন্মুক্ত রেখেছেন সিন্ডিকেটের হোতারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন ও শেখ আকতার উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ###

 

Side banner