ঢাকা রবিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১

এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ৩ দপ্তর

দৈনিক নতুন সংবাদ | তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের, ঢাকা :  অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৩:৩৭ এএম এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ৩ দপ্তর

ঋণ অনিয়ম এবং অর্থপাচাররোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল এস আলম গ্রুপের হাতে। যে কারণে নির্বিঘ্নে নামে-বেনামে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এর ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকাই পাচার করতে সক্ষম হয়েছে শিল্পগোষ্ঠীটি। এতে ধ্বংস কিংবা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে দেশের ৮টি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বিধি অনুযায়ী, গ্রাহককে বড় ঋণ দিতে হলে এর অনুমোদন নিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ (ডস) থেকে। এমনকি ব্যাংকের পর্ষদ সভায় উপস্থাপিত প্রস্তাবনাগুলোও এই বিভাগে পাঠাতে হয়। পাশাপাশি ঋণের নামে নেওয়া অর্থ যাতে পাচার না হয় সেটা তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বা বিএফআইইউ’র। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাই এই বিভাগটিতে নিয়োজিত রয়েছেন। এই দুই বিভাগের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাই ছিলেন এস আলম গ্রুপের আস্থাভাজন। যাদের মধ্যে এই বিভাগের সদ্যসাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিপুল আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচারের বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে। 

ডস ও বিএফআইইউ’র পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের দায়িত্ব পেতো এস আলম গ্রুপের মালিকদের পছন্দের ব্যক্তিরা। নিজেদের পছন্দের বাইরে কেউ এই অফিসের দায়িত্বে আসলেও তাদেরকে নানাবিধ উপায়ে নিজেদের অনুগত করে রাখতো শিল্পগোষ্ঠীটি। কারণ, ব্যাংকগুলোর চট্টগ্রামে অবস্থিত শাখার তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের ওপর। আর এস আলম গ্রুপ অধিকাংশ অনিয়মের ঋণই নিয়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা থেকে। ঋণের নামে বিপুল অর্থ যাতে নির্বিঘ্নে বের করে নিয়ে পাচার করা যায় সেজন্যই চট্টগ্রাম অফিস সবসময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতো এস আলম। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিভিন্ন সুবিধার বিনিময়ে কিংবা চাপে পড়ে শুধু এস আলম গ্রুপের পক্ষে গোপনে কাজ করা নয়, এই শিল্পগোষ্ঠীর মালিকদের বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানেও প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের। কিন্তু এস আলমসহ বিভিন্ন বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠীর মদদদাতা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও এখন পর্যন্ত একজন বাদে এদের কাউকে বিচার কিংবা শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি। এদের কেউ চাকরি থেকে স্বাভাবিক বিদায় নিয়েছেন। বাকিরা পদোন্নতি পেয়েছেন, কিংবা স্বপদে বহাল রয়েছেন।

সাইফুল আলমের ছেলের বিয়েতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা : 

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলমের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় গত বছরের জুনে। চট্টগ্রমের সেই রাজকীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে কয়েকজনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নতুন সংবাদের হাতে এসেছে। 

ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠানে একটি আসনে বসে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা, প্রধান কার্যালয়ের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের তৎকালীন পরিচালক আরিফ হোসেন খান, বিএফআইইউ’র তৎকালীন অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ মহসীন হোসাইনী ও কামাল হোসেন। এদের মধ্যে জহুরুল হুদা গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে অবসরোত্তর ছুটি ভোগ করছেন। আরিফ হোসেন খান নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মহসিন হুসাইনী পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এন্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালকের পদে রয়েছেন। আর কামাল হোসেন ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এন্ড ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি-২ প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। কামাল হোসেন ও মহসিন হুসাইনী গত মাসে পদোন্নতি পেয়েছেন। 

আহসানুল আলমের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়ে মহসিন হুসাইনী নতুন সংবাদকে বলেন, ‘একটি ট্রেনিং কোর্সের প্রশিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করে আমাকে আর কামাল হোসেনকে প্রধান কার্যালয় থেকে ওইদিন সকালে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছিল। ঢাকা থেকে গিয়ে আমরা নির্বাহী পরিচালকের ডরমেটরিতে উঠেছিলাম। দুপুরে আমরা ওখানেই খাওয়া দাওয়া করি। কিন্তু রাতের খাবারের প্রসঙ্গে নির্বাহী পরিচালক জহুরুল হুদা আমাদেরকে জানান, রাতে রান্না হবে না। একটি বিয়ের দাওয়াত আছে। আমাদেরকেও ওখানে যেতে হবে। আমরা যেহেতু দাওয়াতপ্রাপ্ত ছিলাম না, তাই ওখানে যেতে অস্বীকৃতি জানাই। কিন্তু নির্বাহী পরিচালকের জোরাজুরিতে যেতে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও চট্টগ্রাম অফিসের আরও কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত হয়।’ 

তবে এ প্রসঙ্গে জহুরুল হুদা নতুন সংবাদকে বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে আমি কাউকে জোরাজুরি করিনি। বিএফআইইউ’র দুই কর্মকর্তা ঢাকা থেকে এসেছিল। আমি বলেছিলাম, তারা যাবে কি না? পরে আমার গাড়িতেই তারা অনুষ্ঠানস্থলে যায়।’

বিয়ের অনুষ্ঠানে নিজের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে জহুরুল হুদা বলেন, ‘যেকোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি। চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান হিসেবে আমাকে দাওয়াত দেওয়ায় সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম। এমন প্রভাবশালী গ্রুপের দাওয়াত উপেক্ষা করার মতো সাহস আমার ছিল না।’ 

সাইফুল আলমের ছেলের বিয়েতে উপস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান নতুন সংবাদকে বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংক থেকে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। আমি যেহেতু কয়েক বছর চট্টগ্রাম অফিসে ছিলাম, তাই এখানে অনেকেই পরিচিত ছিল। বিয়েতে অংশগ্রহণ উপলক্ষে সবার সঙ্গে দেখা হবে, এ উদ্দেশে তখন চট্টগ্রাম আসা। এছাড়া ধনী মানুষের বিয়ে কেমন হয়, সেটা দেখার আগ্রহও কাজ করেছে এর পেছনে। সামাজিকতা রক্ষার পেছনে কোনও অনৈতিক লেনদেন আছে কি না- এখানে এটা দেখার বিষয়।’ 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া স্বর্থের সংঘাত কি না- জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি ডসের পরিচালক ছিলাম। তাতে কিছু আসে-যায় না। গভর্নর যেভাবে সিদ্ধান্ত দিতেন সেভাবেই কাজ করতে হতো। বিগত সরকারের সময় এস আলম, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, অরিয়ন, থার্মেক্স গ্রুপ ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। আপনি এদের কাজ করতে বাধ্য। এদের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার সুযোগ ছিল না। কাজ না করলে টার্গেটেড হয়ে থাকবেন। আমরা দুর্বল ছিলাম। এরা ধমকিয়ে কাজ করে নিয়েছে। এদের সাথে আমাদের কোনও খাতির থাকতে পারে না। তাদের সাথে আমাদের মূলত ভয়-ভীতির সম্পর্ক ছিল। কাজ করতে বাধ্য ছিলাম। নাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে চাপ আসতো। যেহেতু যুদ্ধ করে পারবো না, তাই অকারণে যুদ্ধবাজ সেজে লাভ নেই।’ 

নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘বেক্সিমকোর ২৩ হাজার কোটি টাকার বেনামি ঋণের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ছিল। এতে সালমান এফ রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে গভর্নরকে ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে গালাগালি করেছিলেন। পরের দিন গভর্নর আমাদেরকে স্টান্ড রিলিজ করবে এমন অবস্থা। গভর্নরকেই যদি তারা ধমকায়, সেখানে আপনি আমি কে?’ 

আরেকটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘গভর্নর ফজলে কবিরের সময় ব্যাংক পরিচালকদের মেয়াদ ৬ বছর থেকে বাড়িয়ে যখন ৯ বছর করা হয়েছিল, ওই প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি লিখেনি। গভর্নরকে সারাদিন সবিচালয়ে আটকে রেখে তার হাতে প্রজ্ঞাপনের খসড়া ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’ 

আরিফ খান বলেন, ‘এখন দেখা যাক আমরা পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারি কি না। এখন স্বাধীন, স্বাধীনভাবে কাজ করবো। আবার যদি রাজনৈতিক সরকার আসে, আবার চাপ আসবে, তখন কাজ করতে পারবো না।’

এস আলম গ্রুপকে সুবিধা দেন বিএফআইইউ’র সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস : 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ বিশ্বাস ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর ডেপুটি গভর্নর পদমর্যাদায় বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বিএফআইইউ’র প্রধান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এর আগে তিনি এই সংস্থার উপপ্রধান ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষে তিনি আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান একই পদে। এর আগে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের প্রধানের দায়িত্ব ও প্রধান কার্যালয়ে অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের (ডস) দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ে তিনি এস আলম গ্রুপসহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীকে অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। বিনিময়ে নিজে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি বর্তমানে মাসুদ বিশ্বাসের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে মাসুদ বিশ্বাসের পাচারকৃত সম্পদের খোঁজ নিতে ১১টি দেশে চিঠি পাঠিয়েছে। 

মাসুদ বিশ্বাসের বিষয়ে দুদকের নথিপত্রে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি আরও কয়েক ডজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগের তদন্ত করছে সংস্থাটি। 

বিএফআইইউ’র প্রধান হিসেবে মাসুদ বিশ্বাসের কর্মকাণ্ড কেমন ছিল সেই বিষয়ে সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নতুন সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত দলগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়গুলো তুলে আনলেও অনেক প্রতিবেদন ধামাচাপা দিতেন মাসুদ বিশ্বাস। এছাড়া বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীগুলো সহ এসব শিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে আমাদের তদন্তদল অনুসন্ধান চালাতে পারতো না মাসুদ বিশ্বাসের কারণে। কোনোভাবে এসব চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন করা হলেও সেগুলো হিমাগারে পাঠিয়ে দিতেন তিনি।’  

বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জন ও পাচারের বিষয়ে একাধিক মাধ্যমে চেষ্টা করেও মাসুদ বিশ্বাসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মাসুদ বিশ্বাসের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন সংবাদকে বলেছেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থেকে অনেক কিছুই বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে। এসব শিল্প গ্রুপকে সুবিধা না দিলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকারই সুযোগ কম ছিল।’ 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাসুদ বিশ্বাসসহ ৬ শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগে বাধ্য হন। তখন বিব্রতকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল মাসুদ বিশ্বাসকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা তাকে তার কার্যালয় থেকে একপ্রকার জোর করেই বের করে এনে প্রধান ফটক পার করে দিয়েছিলেন। প্রধান ফটক পার হওয়ার সময় মাসুদ বিশ্বাসকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তার এমন বিব্রতকর বিদায় কখনও হয়েছে কি না- জানেন না কেউ। 

আরেক আস্থাভাজন কর্মকর্তা জহুরুল হুদা : 
বিএফআইইউ’র পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রাম অফিসে নিযুক্ত হন। এর আগে বিএফআইইউ’র পরিচালক হিসেবে দেড় বছর ও অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগটিতে।

অনুসন্ধানকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নতুন সংবাদকে জানিয়েছেন, এই সাড়ে ছয় বছরে এস আলম গ্রুপের পক্ষ হয়ে বিএফআইইউতে কাজ করেছেন জহুরুল হুদা। এরপর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে চট্টগ্রাম অফিসে ১৪ মাস দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময়ও এস আলম গ্রুপকে ‘ব্যাংক লুটে’ সহযোগিতা করেছেন জহুরুল হুদা। এর প্রতিদান হিসেবে অবসরোত্তর ছুটি ভোগকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক পদও পেয়েছেন তিনি। গত ৫ মে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায়’ এস আলম গ্রুপ ন্যাশনাল ব্যাংকের দখল নেয়। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছিলেন জহুরুল হুদা। 

এসব অভিযোগ খণ্ডন করে জহুরুল হুদা নতুন সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাহী পরিচালক পদোন্নতি পেয়ে আমি যেতে চেয়ছিলাম সিলেট অফিসে। কিন্তু তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান আমাকে চট্টগ্রাম অফিসে পদায়ন করেছিলেন। এই দোষ আমার না। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন, আমি চট্টগ্রামে থাকাকালে এস আলম গ্রুপ কোনও ঋণ নিতে পারেনি।’ 

জহুরুল হুদার কথামতো খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জহুরুল হুদার সময়কালে এস আলম গ্রুপ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অবস্থিত কয়েকটি ব্যাংকের শাখা থেকে নামে-বেনামে দশ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ সুবিধা নিয়েছে। এসব ঋণের বড় অংশই পাচার হয়েছে বলে ধারনা বিভিন্ন সংস্থার। 

এ প্রসঙ্গে আবারও বক্তব্য জানতে চাওয়া হয় জহুরুল হুদার কাছে। তিনি নতুন সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যখন আমাদেরকে শাসিয়ে বলেন, এই এই শিল্পগ্রুপের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এমন কি তদন্তও করা যাবে না, তখন আমাদের ঘাড়ে কয়টা মাথা থাকে? আর যে ঋণগুলো হয়েছে এগুলো অনুমোদন হয় প্রধান কার্যালয় থেকে। এখানে চট্টগ্রাম অফিসের কোনও ভূমিকা থাকে না। অনুমোদনের পর ঋণ ছাড় যেকোনও শাখা থেকে হতে পারে।’

জহুরুল হুদা আবারও দাবি করেন, তার সময়ে কোনও ‍নতুন ঋণ নিতে পারেনি এস আলম গ্রুপ। আর আর এই শিল্পগোষ্ঠীর নেওয়া ঋণগুলো খেলাপি করার সময়ও হয়নি তখন। 

Side banner