ন্যাশনাল ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খান ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) শেখ আকতার উদ্দিন আহমেদ মিলে ব্যাংকটিকে ৪৬৮ কোটি টাকা লোকসানে ফেলেছেন। বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে বিক্রির মাধ্যমে এক বছরেই এই বড় ক্ষতিতে ফেলেন ব্যাংকটিকে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসলে চাকরি হতে অব্যাহতি নেন তৌহিদ। ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান কর্পোরেট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ডি এম রফিকুল ইসলাম এসব বিষয় উল্লেখ করে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি দিয়েছেন।
চিঠি সূত্রে জানা যায়, তৌহিদুল আলম বর্তমানে এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচলক (এমডি) হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। ইতোমধ্যে এনআরবিসির পর্ষদ তৌহিদের নিয়োগ অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে। অন্যদিকে শেখ আকতার ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি পদের চলতি দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়েছেন কৌশলে। এখন চেষ্টা করছেন এমডি হতে।
তৌহিদুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে এস আলম গ্রুপ কর্তৃক ন্যাশনাল ব্যাংক দখলে সহযোগিতা করার। অন্যদিকে শেখ আকতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ সিকদার গ্রুপের ব্যাংক লুটে সহযোগিতার।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তৌহিদুল আলম এক বছরের জন্য এমডি নিযুক্ত হয়ে এস আলম গ্রুপের ন্যাশনাল ব্যাংক দখলে সহযোগিতা করতে বিভিন্ন অপকর্ম করেন। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনর্গঠিত নতুন পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির দায়িত্বে আসে। এ সময় নিজে এমডি হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে ডিএমডি শেখ আকতার পর্ষদের কাছে এমডি তৌহিদুল আলমের সব অপকর্ম ফাঁস করে দেন। এ সময় বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে বিক্রির মাধ্যমে ব্যাংকের ক্ষতি করার বিষয়টিও চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন আকতার।
ডিএমডি আকতারের এসব অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে ব্যাংকটির পর্ষদ নিরীক্ষা বিভাগকে দায়িত্ব দেন। ব্যাংকটির নিরীক্ষা বিভাগ অনুসন্ধান করে পর্ষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। তাদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই ডলার কারসাজির সাথে শুধু তৌহিদুল নয়, শেখ আকতারও জড়িত। দুজনে মিলেই ডলার কারসাজির মাধ্যমে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের লোকসান করেছেন।
তৌহিদুল আলমের অপকর্মের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেন। এ সময় তিনি ব্যাংকের কাছে লিখিত মুচলেকা দেন। এতে তিনি অঙ্গীকার করেন, অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দেশের কোথাও কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবেন না। পাশাপাশি শেখ আকতারও একটি পদত্যাগপত্র ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদের কাছে দিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, লিখিত মুচলেকার মাধ্যমে অঙ্গীকার দেওয়ার পরও তৌহিদুল আলম খান তা অমান্য করে নিজের অপকর্মের তথ্য গোপন করে এনআরবিসি ব্যাংকে চাকরির আবেদন করেন। এমন কর্মকর্তাকে কীভাবে এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ তাদের এমডি হিসেবে মনোনীত করেন, সেটা নিয়েও আক্ষেপ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরিত ওই চিঠিতে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, তৌহিদুল আলম খান ও শেখ আকতারের ডলার কারসাজির বিষয়টি বর্তমানে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ, সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তৌহিদুল আলম খানকে এমডি হিসেবে নিয়োগ অনুমোদন না করার অনুরোধ করা হয়েছে আলোচ্য চিঠিতে।###
আপনার মতামত লিখুন :