প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের বর্তমান ইউএনও কামাল হোসেন।
মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা পরিচয়ে প্রতারণা করে কোটা সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরি নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হয়েও কামাল হোসেন কিভাবে এখনো বহাল তবিয়তে ইউএনওর দায়িত্ব পালন করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে নাচোলে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম ও ঘুস কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন ইউএনও কামাল হোসেন।
জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে দুদক কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের উপসহকারী পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
দুদকের এজাহারে বলা হয়, আসামি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে জন্মদাতা পিতা আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে আপন চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নেন। প্রতারণা ও জাল–জালিয়াতির অভিযোগে আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, মো. কামাল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি এবং ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নকালীন পিতার নাম হিসেবে তার প্রকৃত জন্মদাতা পিতা মো. আবুল কাশেমের নাম ব্যবহার করেন। পরবর্তী সময়ে একই স্কুলে নবম শ্রেণিতে তিনি তার আপন চাচা মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি পরীক্ষায় চাচা-চাচির নামই পিতা-মাতার নাম হিসেবে ব্যবহার করেন।
এছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে মো. কামাল হোসেন তার জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রকৃত পিতা-মাতার পরিবর্তে চাচা-চাচির নামই ব্যবহার করেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে কামাল হোসেন আপন চাচা-চাচিকে পিতা-মাতা সাজিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে মামলাটির ডিএনএ টেস্ট না করতে জোর তদবির চালাচ্ছেন কামাল হোসেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী ছিলেন কামাল হোসেন—মাঠ প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে তা নিশ্চিত করেছেন। সমালোচনার মুখে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা থেকে বদলি হয়ে গত ৮ জুলাই থেকে বর্তমানে নাচোল ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. কামাল হোসেন। নাচোলে যোগদানের কিছুদিন পরই নানা অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যে মশগুল হয়ে পড়েছেন কামাল হোসেন।
নাচোল উপজেলার ঠিকাদার আকতারুল ইসলাম বলেন, নাচোলে যোগদানের পর থেকে ইউএনও কামাল হোসেন এলজিইডি সহ বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডার বিল পাশ করাতে পাঁচ পার্সেন্ট হারে ঘুষ নিচ্ছেন। কিছুদিন আগে আমার একটি টেন্ডার বিলে সই করার জন্য তার সিএস রবিউলের মাধ্যমে ফাইল প্রতি পাঁচ পার্সেন্ট ঘুস নেন ইউএনও।
সাংস্কৃতিক শিল্পী অলিউল হক ডলার বলেন, সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ৩৬ হাজার টাকার আমার নামের চেক গত এক মাস থেকে ইউএনও আটকে রেখেছেন। বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে হয়রানি করছেন ইউএনও।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামাল হোসেনের সাথে একাধিকবার তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, নাচোল ইউএনওর বিষয়ে তার যাবতীয় কাগজপত্র তদন্ত চলছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :