আসন্ন নির্বাচনে এক পরিবার থেকে দুই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান অন্তত ডজনখানেক পরিবার। যেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বেশিরভাগই চান জোড়া প্রতিনিধিত্ব। নতুন প্রজন্মের প্রার্থীরা বলছেন, পরিবারের প্রভাবমুক্ত থেকে যোগ্যতা প্রমাণ দিতে চান তারা। আর বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবার নয়, বিবেচিত হবে নিজস্ব জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও দলের প্রতি ত্যাগ।
যেখানে পরিবার মানেই নেতৃত্বের বৈধতা আর রক্তের সম্পর্ক মানেই অধিকার। সেখানে সাধারণের চোখে সবক্ষেত্রে চাচা-মামার প্রভাব, একইসাথে অবধারিত বিষয় এবং সামাজিক সমস্যাও বটে।
যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা পরিবারতন্ত্রকে শুধু একটি সমস্যা নয়, বরং ঐতিহাসিক বাস্তবতা হিসেবেও দেখছেন। আমাদের সামনে আসন্ন নির্বাচনে এমন বাস্তবতা গণমাধ্যমের শিরোনাম ‘এক পরিবার থেকে ২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান যারা’। এখন টিভির খোঁজ, অন্তত ডজনখানেক পরিবার জোড়া প্রতিনিধিত্ব চান ত্রয়োদশ সংসদে।
একই পরিবারের বিএনপি দুই নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর সরাফত আলী সপু ও মীর নেওয়াজ আলী মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার দুইটি আলাদা আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমাদের প্রশ্ন এটি সংকট নাকি সম্ভাবনা বাড়াবে?
বিএনপির নির্বাহী কমিটির যুব-বিষয়ক সহ-সভাপতি মীর নেওয়াজ আলী বলেন, ‘দুই ভাই যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আপনি তাকে ফেইল করাবেন? তাহলে কি আপনি ডিসকারেজ করাবেন? মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হলে কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না যদি জনগণ চায়।’
সেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু বলেন, ‘আমরা দুই ভাই যার যার যোগ্যতায় এখানে এসেছি। সেজন্য দল যেটা ভালো মনে করবে সেটাই করবে, আমরা সেটাই মেনে নেব। কারণ দল অনেক বড়, এখানে সবারই ত্যাগ আছে।’
জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বেশিরভাগের পরিবার থেকেও দুইজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
দলটির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সন্তানরাও মনোনয়ন চান। তবে বাবার পথ ধরে রাজনীতিতে আসলেও নিজেদের স্বতন্ত্রতা ধরে রেখে রাজনীতির মাঠে প্রমাণ দিতে চান তারা।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত তৃণমূলে আমাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করে আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা এলাকায় হয়েছে। আমি আমার নিজের যোগ্যতা অনু্যায়ী দলের পক্ষে, দেশের পক্ষে কাজ করতে চাই।’
নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্যই পিআরের দাবি তোলা হয়েছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু বলেন, ‘বাবার পরিচয় আমাকে রাজনীতিতে আসতে সাহায্য করেছে। কিন্তু এটা ধরে রাখাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ব্যক্তিগতভাবে জনগণ আমাকে কিভাবে দেখে এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সেসাথে তাদেরকে মনোনীত করার মধ্য দিয়ে কেউ বঞ্চিত হবে না বলেও মনে করেন তরুণ এই নেতারা।
ড. খন্দকার মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমার বাবার জনপ্রিয়তা, আমার নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা, আমার যোগ্যতার কারণে আমি মনে করি না যে এখানে অন্য কেউ বঞ্চিত হবেন। জনগণ আমাকে সমর্থন করছে বলে আমি মনে করি।’
ইসরাফিল খসরু বলেন, ‘কনশাসলি চিন্তা করে রাজনীতিতে আসি নি। নিজের অজান্তেই এলাকায় কাজ করতে করতে জড়িয়ে যাওয়া। এরপর পরিসর বাড়িয়েছি। বাবা আমাকে সবসময় বলতেন রাজনীতি করতে চাইলে মাঠ থেকে ওঠে আসতে হবে। তৃণমূলকে বুঝতে হবে। সেটাই করার চেষ্টা করছি।’
যদিও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও দলের প্রতি ত্যাগ বিবেচনা করা হবে। তবে পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়াটাকেও দল অযোগ্যতা হিসেবে দেখবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারাই মনোনয়ন পাবে তারা শুধু আত্মীয় এই বিবেচনা করা হবে না। তাদের যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা বিবেচনা করা হবে। মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা, মেধা প্রজ্ঞা এগুলো সবই বিবেচনা করা হবে। শুধুমাত্র পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এগুলো রাজনৈতিকভাবে যোগ্যতা হতে পারে না।’
এছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছোট ভাই মির্জা ফয়সাল আমিন, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ এবং মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সহধর্মিণীরাও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
আপনার মতামত লিখুন :