বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে গেলে লাভ-ক্ষতি কী হতে পারে, মতাদর্শের ‘ট্যাগ’ লাগাতে পারে, তা নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় আলোচনা হয়েছে।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সভা হয়। এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বেশির ভাগ নেতা শুক্রবারের সভায় অংশ নেন। নির্বাচনী জোটের হিসাব–নিকাশ নিয়ে নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় আলোচনা হওয়ার বিষয়টি এনসিপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সভায় অংশ নেওয়া নেতারা বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াত- দুই দলই আগামী নির্বাচনে এনসিপিকে সঙ্গে রাখতে চায়। বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে কোনো নির্বাচনী জোট বা সমঝোতায় গেলে লাভ–ক্ষতি কী হতে পারে, তা নিয়ে নেতারা মতামত দিয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় কোনো জোটে যাওয়া নিয়েও সভায় কথা হয়েছে।
আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে ওই নেতারা বলেন, বিএনপি কোনো আসনে ছাড় দিলেও যদি দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়ে যান, তাহলে এনসিপির প্রার্থীদের জিতে আসা কঠিন হবে। এর ফলে বিএনপির সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় গেলে এনসিপির কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আবার জামায়াতের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় গেলে এনসিপির গায়ে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শের ‘ট্যাগ’ লাগতে পারে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে এনসিপির রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এনসিপির ‘মধ্যপন্থী’ চরিত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় জোটে থাকাই ভালো হবে- বিভিন্ন নেতার বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় সমন্বয় সভা করে এনসিপি। সেই সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। তখন ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, অক্টোবর মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, শুক্রবার আমাদের নির্বাহী কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আমাদের সিদ্ধান্ত হলো- জুলাই সনদের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত যে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, সরকার এখনো তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করেনি। সেই কারণে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। পাশাপাশি, কিছু বিষয়ে স্বাক্ষর ও অনুমোদনের ধাপ রয়েছে, যেগুলো সম্পন্ন হলে উচ্চকক্ষ পর্যায়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো পরিষ্কার হবে। গণভোটের সময়সূচি নিয়েও একটি প্রাথমিক হিসাব ও আলোচনা চলছে- এসব বিষয় আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, জোট গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি উচ্চকক্ষের বিষয়ে সম্মতি পাওয়া যায়, তবে আমরা সে অনুযায়ী অগ্রসর হবো। বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেই। তবে বিএনপি–জামায়াতের বাইরে কিছু সংস্কারপন্থী ও মধ্যমপন্থী দল নিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখানেও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :