ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ইউনূস একটি কথাও বলেননি: মেজর হাফিজ

দৈনিক নতুন সংবাদ | নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : আগস্ট ২, ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ইউনূস একটি কথাও বলেননি: মেজর হাফিজ
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ফাইল ছবি)

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এমনকি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কখনো একটি কথা বলেননি।

শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারবর্গকে সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন এসব কথা বলেন। আইইবি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন যাঁরা উপদেষ্টা রয়েছেন, তাঁদের কেউ গত ১৭ বছর শেখ হাসিনার অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। একমাত্র (আইন উপদেষ্টা) আসিফ নজরুল মাঝে মাঝে দু-চারটি কথা বলেছেন। এমনকি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস—দেশ বরেণ্য ব্যক্তি, আমরা সকলে তাঁকে শ্রদ্ধা করি, তিনি হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একটি কথা কখনো বলেন নাই।’


মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রধান কারণ অভ্যুত্থানের পর যে সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, তারা শহীদদের চেতনাকে ধারণ করে না। দুর্ভাগ্য আমাদের, এই দেশ বীরদের ধারণ করতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘সব সময়ই বিপ্লবে যাঁরা জীবন দেন, বিজয়ের পরে তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। বারবার জীবন দেয় সাধারণ মানুষ, আর এর ফলাফল ভোগ করে একশ্রেণির কুটিল রাজনীতিবিদেরা। কোত্থেকে তারা উড়ে এসে সকল কৃতিত্ব দাবি করে, জনগণকে নসিহত করা শুরু করে। তারা বারবার জাতিকে ভুল পথে নিয়ে যেতে চায়।’

গণ-আন্দোলনের পটভূমি বিএনপি নির্মাণ করেছে দাবি করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘যারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ করেনি, তারা এখন পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত। তারাই এখন জাতিকে সবক দিচ্ছে।’

জুলাই-আগস্টের সংগ্রামে মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, নির্বাচন কি পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে হবে নাকি আসনের পদ্ধতিতে হবে, এটির জন্য মানুষ জীবন দেয়নি। মানুষ জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন দেওয়া।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘যারা মহারথী একবার ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে গেছে, তারা এখন আর যেতে চায় না। এখন শুধু ঘুরায় আর প্যাঁচায়। সংস্কার তো একটা দরকার, সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে নাই অনির্বাচিত ব্যক্তিরা সংবিধান সংশোধন করে। এখানে সেটাই প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। জনগণ ও সংসদের সম্মতি ছাড়া কীভাবে এরা সংবিধান সংশোধন করতে চায়। সংবিধানকে আমরা রক্ত দিয়ে ’৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেছি; সেটিকে তারা ছুড়ে ফেলে দিতে চায়।’

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা ছিলাম ৮০ হাজার। আর এখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আড়াই লক্ষ (লাখ)। এটির কৃতিত্ব আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। কারণ, তারা যখনই সময় পেয়েছে, আত্মীয়-স্বজন চৌদ্দগোষ্ঠীর যারা আছে, তাদের এই তালিকায় ঢুকিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লুটপাট খুব ভালো মতো করেছে তারা। পালানোর দুই দিন আগে তাঁর (শেখ হাসিনার) পরিবারের সদস্যদের বলেছে, এখন ভাগো। একটা শেখ গোষ্ঠীর কাউকে ধরতে পারে নাই।’

নির্বাচন না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কখনো ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন মেজর হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার না হলে কেউ এ দেশে বিনিয়োগ করবে না।... এখানে এখন মবক্রেসি, অ্যারিস্টোক্রেসি (অভিজাততন্ত্র) চলছে। বিদেশ থেকে ধার করে আনা আঁতেলরা আমাদের শেখাচ্ছেন, কীভাবে বাংলাদেশ চলবে।’

সাবেক বিচারপতি, পুলিশ কর্মকর্তাদের সেনানিবাসে আশ্রয় দিয়ে সেনাবাহিনী ঠিক করেনি বলে মন্তব্য করেন অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে এমন আন্দোলন হয়েছে, মসজিদের খতিব পর্যন্ত পালিয়ে গেছেন। প্রধান বিচারপতি এবং ছয় শ পুলিশ কর্মকর্তা যাঁরা গুলি করে মানুষ মেরেছেন, তাঁরা সেনানিবাসে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। সেনাবাহিনী তাঁদের আশ্রয় দিয়েছে; এটি তারা ঠিক কাজ করেনি। ###

Side banner