বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার দাবির আন্দোলনের সংগঠক ছাত্র মহিউদ্দিন রনি ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় এ অভিযোগ করেন।
মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগ যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগে ১২ জনের নামে এবং অজ্ঞাত ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন- আন্দোলনের প্রধান নেতা মহিউদ্দিন রনি, রাকিন, সুনান, সিফাত, শামিম, আল মুসা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেত্রী সিফা, হাসপাতালে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থী দাইয়ান, কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি, এইচএম আবুল খায়ের, হাসপাতালের দালাল নুরুন নাহার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর সিয়াম ওরফে ন্যাভাই।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের দাবিতে হাসপাতালের গেটের সামনে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ সময় অভিযুক্তরা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি-সোটাসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনিভাবে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন রনি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচ্ছন্নকর্মী রফিকুল পাটোয়ারীর মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।
এছাড়া ২-১১ নম্বরসহ অজ্ঞাত অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্য হাতে থাকা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি দিয়ে ২-১১ নম্বর সাক্ষীদের এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে অফিস সহায়ক পারভেজের ডান হাতে, আয়া সেলিনার ডান হাতের কনুর উপরিভাগে, অফিস সহায়ক রাব্বির বাম হাতের কব্জিতে এবং পরিচ্ছন্নকর্মী শামীমের ডান হাতে হাড় ভাঙা জখম হয়।
তাদের হামলায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসান, সাকিব, জাকারিয়া রুবেল, অফিস সহায়ক ফয়সাল রাব্বি, আয়া সুমরত মন্ডল, লিফট অপারেটর শাকিলসহ মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হন। এমনকি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নারী নার্স এবং আয়াদের সেলোয়ার-কামিজ ছিঁড়ে শ্লীলতাহানি ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ সময় পথচারী ও স্থানীয় লোকজন এসে অভিযুক্তদের কবল থেকে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে ওই স্থানে পুনরায় মানববন্ধন করলে তাদের খুন-জখমের হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর আহত ১১ জন কর্মচারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ উপ-পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান শাহীনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর।
অপরদিকে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকালে হামলার ঘটনা নিয়ে সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মহিউদ্দির রনি। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতালের কর্মচারী নামধারীরা তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে হামলা করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উসকানিতে এ হামলার ঘটনায় তাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরপরও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মহিউদ্দিন রনি।
আপনার মতামত লিখুন :