রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে আলোচিত প্যানেল ‘আধিপত্য বিরোধী ঐক্য’ থেকে তিনজন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। সবশেষ প্যানেলের শীর্ষ তিন পদের একটি সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী সাবেক সমন্বয়ক আকিল বিন তালেবও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ ঘোষণা দেন তিনি।
সরে দাঁড়ানো অন্য দুজন হলেন- মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদপ্রার্থী ফাহির আমিন এবং সহ-মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী এম শামিম। তারা প্রত্যেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক তিনজন সমন্বয়কের নেতৃত্বে ‘আধিপত্য বিরোধী ঐক্য’ প্যানেলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সাবেক সমন্বয়কদের ঐক্যকে এই প্যানেলের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে আলোচনায় ছিল। তবে ক্যাম্পাসে আলোচনা ও গুঞ্জন রয়েছে, এই প্যানেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কিংবা ছাত্রশিবিরের ‘ছায়া টিম’ হিসেবে কাজ করছে।
প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘স্লোগান মাস্টার’ হিসেবে। ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসের পোষ্য কোটাসহ নানা আন্দোলনে সক্রিয় থেকে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন এই প্যানেলে থাকা তিন সমন্বয়ক।
সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ফেসবুক পোস্টে প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী আকিল বিন তালেব লিখেছেন, সাম্প্রতিক নানা বাস্তবতায় এবং ব্যক্তিগত কিছু কারণে আমি ‘আধিপত্য বিরোধী ঐক্য’ প্যানেল থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। একটি প্যানেল মূলত টিমওয়ার্কের মাধ্যমে গড়ে ওঠে, তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তির যোগ্যতা, সততা ও কর্মদক্ষতার ওপর। আমাদের ভেতরে পারস্পরিক বোঝাপড়ার কিছু ঘাটতির কারণে অনেকে ইতোমধ্যে সরে দাঁড়িয়েছেন। আমিও সেই ধারাবাহিকতায় প্যানেল থেকে সরে যাচ্ছি।
এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, তবে এটুকু বলতেই চাই, এই প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থী অত্যন্ত যোগ্য। আমি আসন্ন রাকসু নির্বাচনে এজিএস এবং সিনেট সদস্য এই দুইটি পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবতায় আমার পক্ষে একসঙ্গে দুই পদে প্রচারণা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু রাকসুর মূল কার্যকারিতা সিনেটের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে, যেখানে নির্বাচিত সিনেট সদস্যরা শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলবেন, তাই আমি কেবল সিনেট সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন থেকে আমি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রচারণা চালিয়ে যাবো।
এছাড়া ভবিষ্যতে বৃহত্তর স্বার্থে কোনো প্যানেলের সঙ্গে সমন্বয় বা অ্যালায়েন্স করার প্রয়োজন হলে, সময়মতো সেই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
এর আগে ১২ সেপ্টেম্বর তিন সাবেক সমন্বয়কের প্যানেল থেকে সরে দাঁড়িয়ে মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহির আমিন ফেসবুকে লিখেছেন, আসন্ন রাকসু নির্বাচনে আধিপত্য বিরোধী ঐক্য প্যানেল থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক কারণে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং প্যানেল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্যানেলের সহ-মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক এম শামীম রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার গুঞ্জন থাকায় প্যানেল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার ব্যক্তিগত এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এই কারণ উল্লেখ করেন।
প্যানেল ভাঙনের বিষয়ে জানতে সাবেক সমন্বয়ক ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব ও জিএস সালাউদ্দিন আম্মারকে মোবাইলে কল করা হলে তারা সাড়া দেননি।
আপনার মতামত লিখুন :