মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার নতুন ভিসা নীতিতে ঘোষণা করেছেন, যেখানে এইচ-১ বি ভিসার জন্য প্রতি বছর ১ লাখ ডলার মাশুল গুনতে হবে। আর এইচ-১বি ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন বহু ভারতীয়, এতে তাদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে আত্মনির্ভরতার বার্তা দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) গুজরাটের ভাবনগরে এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি বলেন, ভারত আজ ‘বিশ্ববন্ধু’র আদর্শে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বে আমাদের কোনও বড় শত্রু নেই। কিন্তু আমাদের প্রকৃত শত্রু হল অন্য দেশগুলোর ওপর পরনির্ভরতা। এটাই আমাদের সবথেকে বড় শত্রু। আর আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করলে ভারতের এই শত্রুকে নিজেরাই বিনাশ করতে পারব। পরনির্ভরতা শত্রুকে পরাজিত করতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যত বেশি আমরা বিদেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব, ততই আমাদের ব্যর্থতা ধরা দেবে। বিশ্বে শান্তি, স্থায়িত্ব ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতকে আত্মনির্ভর হতেই হবে।’
মোদি বলেন, ‘১৪০ কোটি ভারতবাসীর ভবিষ্যৎ আমরা অন্য দেশের হাতের ছেড়ে দিতে পারি না। ভারতের উন্নয়নকে আমরা অন্যের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারি না। ফলে কয়েকশো দুঃখের একটাই দাওয়াই, তা হল ভারতকে ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলা।’
সমুদ্র-নির্ভর বাণিজ্যে ভারতের অতীত গৌরবহানির জন্য কংগ্রেসের আর্থিক নীতিকে দুষে তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে জাহাজ নির্মাণ শিল্প দুর্বল হওয়ার কারণে এত দিন ধরে বছরে ছয় লাখ কোটি রুপি বিভিন্ন দেশের জাহাজ এবং নৌ সংস্থাকে পণ্য পরিবহণের ভাড়া হিসেবে দিতে হয়েছে, যা ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান।’
২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বন্দর এবং সমুদ্র বাণিজ্যে পৃথিবীর অগ্রণী শক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এইচ-ওয়ান বি একটি বিশেষ ভিসা কর্মসূচি, যার আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলো অস্থায়ীভাবে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি বা প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ৮৫ হাজার বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
মূলত বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল বিদ্যা এবং ব্যাবসায় প্রশাসনে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয় এ ভিসার আওতায়। অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল, গুগল প্রভৃতি কোম্পানিগুলো এই ভিসা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় লাভবান বা সুবিধাভোগী। এতদিন এই প্রোগ্রামে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোকে ভিসা বাবদ প্রতি বছর ১ হাজার ৫০০ ডলার ফি দিতে হতো।
যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতের কর্মীদের বলা হয় স্টেম ওয়ার্কার। মার্কিন পরিসংখ্যান দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশটিতে যত সংখ্যক বিদেশি স্টেম ওয়ার্কার ছিল, এইচ-ওয়ান বি ভিসা কর্মসূচি চালু হওয়ার পর সেখানে যোগ হয়েছেন আরও ২৫ লাখ বিদেশে স্টেম ওয়ার্কার। শতকরা হিসেবে ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ ভিসা কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকর্মীদের হার বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এই কর্মীদের অধিকাংশই ভারত এবং চীন থেকে আসা।
এদিকে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে মূলত ভারতীয়দের ওপর। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসাধারীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ভারতীয় নাগরিক। বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং টেক বিশেষজ্ঞরা কাজ করে আসছেন।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে সুযোগ হিসেবেই দেখছেন ভারতের নীতি আয়োগের সাবেক সিইও অমিতাভ কান্ত। তার মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা-গবেষণায় খরা আসতে চলেছে। একই সঙ্গে গতি আসবে ভারতীয় উদ্ভাবনে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরেই এক এক্স বার্তায় তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রতিভার জন্য দরজা বন্ধ করে দিল যুক্তরাষ্ট্র। গবেষণা, উদ্ভাবন, স্টার্টআপ, পেটেন্টের ঢেউ এবার বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, পুণে ও গুরুগ্রামের দিকে আসতে যাচ্ছে। দেশের সেরা চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা ‘বিকশিত ভারতের’ দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই ক্ষতি হবে আর প্রাপ্তি ভারতের।’
আপনার মতামত লিখুন :