ঢাকা শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২

জনবল সংকটে পৌরসভা, ৩১ হাজার পদ ফাঁকা

দৈনিক নতুন সংবাদ | মোঃ সো‌য়েব মেজবাহউদ্দিন, ঢাকা : আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৮:৩৯ পিএম জনবল সংকটে পৌরসভা, ৩১ হাজার পদ ফাঁকা

দেশের ৩৩০টি পৌরসভায় ৩১ হাজার ১৪২টি পদ শূন্য থাকায় নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারির ঘাটতির কারণে একজন কর্মকর্তাকে সামলাতে হচ্ছে একাধিক পদ। ফলে স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, প্রকৌশল কাজ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাপক ব্যাঘাত হচেছ। 
দেশের ১২ সিটি কর্পোরেশনের বাইরে ৩৩০টি পৌরসভা ক, খ ও গ—এই তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। এসব পৌরসভার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা প্রায় ১ হাজার ৯১২টি পদ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ২৯ হাজার ২৩০টি পদ বছরের পর বছর শূন্য পড়ে আছে। সব মিলিয়ে শূন্য পদের সংখ্যা ৩১ হাজার ১৪২টি। একদিকে জনবল সংকট আরেক দিকে হচ্ছে না পদোন্নতিও। শূন্যপদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ পদে ১০ থেকে ১৪ বছর ধরে পদোন্নতি হয়নি, বিশেষ করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো পদোন্নতি হয়নি।
দীর্ঘদিন শূন্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে রয়েছে—পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (পূর্বপদ সচিব), প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী ও উপসহকারী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক, সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা এবং মেডিকেল অফিসার। জনবল সংকটে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে প্রশাসন, প্রকৌশল ও স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রশাসন বিভাগের প্রধান ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ মেয়র বা প্রশাসকের সঙ্গে যৌথভাবে পৌর তহবিল ও প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু অনেক পৌরসভায় এই পদ শূন্য; কোথাও আবার একজন কর্মকর্তাকে একাধিক পৌরসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হতে পারছেন না। অধিকাংশ পৌরসভায় মেডিকেল অফিসার না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটেশন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে; মশক নিধন কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। 
রংপুর অঞ্চলের একটি ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভার প্রশাসক বলেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ এত বেশি যে তা সামলানো কঠিন। মূল দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা কষ্টসাধ্য।

বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএস) সভাপতি ও গোসাইরহাট পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আলীম মোল্লা বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে অনেক কর্মকর্তা একসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব পালন করছেন, ফলে নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা যদি একাধিক পৌরসভার দায়িত্বে থাকেন, তাহলে কোথাও পর্যাপ্ত সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। শুধু কর্মকর্তা নয়, কর্মচারীর সংখ্যাও প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের নিচে, যা সেবাকে প্রভাবিত করছে।’
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের (এলজিআরসি) সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রয়োজনীয় জনবল ছাড়া কোনো পৌরসভা টেকসই নাগরিক সেবা দিতে পারে না। সংকট দীর্ঘায়িত হলে শহরের জীবনমান ক্রমেই নিম্নগামী হবে। জনবল সংকট শুধু প্রশাসনিক সেবা নয়, বরং উন্নয়ন প্রকল্প, নাগরিক সুবিধা প্রভাবিত করছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।’
বাংলাদেশ পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নোয়াখালী পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নূরে আলম বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির জন্য খসড়া জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রকাশ করে। এরপর ২০২৩ সালের ৫ জুলাই চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রণয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠানো হয়। তবুও প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে ১২ বছরের চাকরির পরও পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া হয়নি। পদোন্নতি ছাড়া সরাসরি নিয়োগ হলে ফিডারধারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বঞ্চিত হবেন এবং আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত পদোন্নতির দাবি জানাচ্ছি।’###

Side banner