ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

সাহসের অভাবে পূর্ণতা পেল না বাংলাদেশের প্রস্তুতি

দৈনিক নতুন সংবাদ | ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকাঃ সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১২:২৬ পিএম সাহসের অভাবে পূর্ণতা পেল না বাংলাদেশের প্রস্তুতি

আগের ম্যাচের একাদশ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী যতোই ‘ফ্লপ’ হোক, আসন্ন ম্যাচ নিয়ে ভেতর থেকে কোনো খবর মিলুক না মিলুক, সম্ভাব্য একাদশ সাজানোর একটা দায়িত্ব প্রতি ম্যাচের আগেই কাঁধে বর্তে যায়। ‘ডাচ-বাংলা’ সিরিজের শেষ ম্যাচের আগেও স্বাভাবিকভাবেই সেটা এলো। 

সেটা সাজাতে গিয়ে একটা ‘অতিমাত্রায় ইউটোপিয়ান’ ভাবনা মাথায় খেলে যাচ্ছিল। আগের দুই ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ব্যাট হাতে ধরার সু্যোগ পেয়েছেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম আর পারভেজ হোসেন ইমন। সিরিজ জেতা যেহেতু হয়েই গেছে, শেষ ম্যাচে তাদের বসিয়ে দিলে কেমন হয়? 

ম্যাচে যে পরিবর্তন আসছে বেশ কিছু; একাদশে আসছেন নুরুল হাসান সোহান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন আর শরিফুল ইসলাম, খবরটা আগেই জেনেছিলাম। কিন্তু কাদের জায়গাতে আসবেন তারা, তা নিয়ে একটু ধোঁয়াশা ছিল। মোস্তাফিজুর রহমান আর তাসকিন আহমেদের একজন বিশ্রাম পাচ্ছেন তা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু অন্য কে বা কারা বেঞ্চে বসবেন? 

তক্ষুণি ভাবনায় এল দুই ওপেনারকে বসানোর কথা। তাদের বাদ দিলেও কিন্তু একাদশে দুই বিশেষজ্ঞ ওপেনার রয়ে যান– লিটন দাস আর সাইফ হাসান। তাদেরকে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে দিলে বিকল্প ওপেনারদেরও নতুন ভূমিকায় বাজিয়ে দেখা হয়ে যায়! 

লিখতে লিখতেই মনে হলো, ধুর এমন কিছু হয় নাকি! যে দলটা প্রথম ম্যাচে জিতেও দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং নিয়ে কোনো পরীক্ষানিরীক্ষায় যায়নি, তারা শেষ ম্যাচে গোটা ব্যাটিং লাইন আপকেই খোলনলচে বদলে ফেলবে, তা হয় কী করে হয়! শেষমেশ গৎবাঁধা স্কোয়াড সাজিয়েই দায় সারতে হলো।

শেষ বিকেলে এল চমক। বাংলাদেশ তাদের একাদশে এনেছে ৫ পরিবর্তন। আর হ্যাঁ, দুই ওপেনারকে দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম! সুযোগ পেয়েছেন পুরো সিরিজে অপেক্ষায় থাকা নুরুল হাসান সোহান আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

টসটা বাংলাদেশ জিতল না। জিতল ডাচরা। বাংলাদেশকে পাঠাল ব্যাটিংয়ে। যা নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে কথাও হয়েছে অনেক। সেদিন টস জিতে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে পাঠিয়েছিল ব্যাট করতে, আগের ম্যাচটা ৩৩ ওভারে শেষ হয়ে যাওয়ার পরও। শেষ ম্যাচে কী করত টস জিতলে, তা বলা মুশকিল; সে মুশকিলটাই সহজ করে দিল ডাচরা। 

ব্যাট হাতে নেমে লিটন সুপারহিট, সাইফ ‘অ্যাভারেজ’। আপনি ফ্লপ বলতেই পারেন চাইলে, তবে টি-টোয়েন্টিতে ওপেন করতে নেমে ৮ বলে ১২ করাও খুব বড় পাপ নয়। তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম সাইফকে ফ্লপ বললেন আপনি, তাহলে ১৪ বল খেলে কোনো চার ছয় ছাড়া ৯ রান করা তাওহীদ হৃদয়কে কী আখ্যা দেবেন? ‘সুপারফ্লপ’?

পুরো সিরিজে ব্যাটিং না পেয়ে শামীম পাটোয়ারীর ছক্কার মেশিনে যেন মরচে ধরেছিল, তিনি ১৯ বলে করতে পারলেন মোটে ২১। তবে ফিনিশার জাকের আলীর কামান সে দোষে দুষ্ট হলো না, একটা করে ছক্কা আর চারে ১৩ বলে তুললেন ২০। বহুদিন পর দলে ফেরা সোহান যেন আরও ক্ষুরধার, ২০০ স্ট্রাইক রেটে ২২ রান, তাতে দুটো ছক্কা। দুজনের ২৩ বলে ৪২ রানের জুটিতে বাংলাদেশ যখন ২০০ দেখছে দৃষ্টিসীমায়, তখনই এল বেরসিক বৃষ্টি। 

সে বৃষ্টি আর থামল না। থামল যখন ম্যাচটাও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো তখন। সঙ্গে সঙ্গে একটা আফসোস রয়ে গেল বৈকি! বেশ কিছু বিষয় যে বাজিয়ে দেখা হলো না!

কী কী বিষয় বাজিয়ে দেখা হলো না, চলুন দেখা যাক। এশিয়া কাপের স্কোয়াডে থাকা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এই আসরে যাচ্ছেন কোনোপ্রকার ম্যাচ অনুশীলন ছাড়াই, এটা সবার আগে সামনে চলে আসছে। অধিনায়ক লিটনের চোখেও ধরা পড়েছে। তবে এ ছাড়া আর ‘কোনো’ খামতি নেই দলের প্রস্তুতিতে, মনে করেন তিনি।

যদিও দলের বড় একটা সমস্যা আছে বৈকি! আমিরাত আর পাকিস্তান, দুই অ্যাওয়ে সিরিজে বাংলাদেশ ২০০র কাছাকাছি রান তুলেও হেরেছে একাধিকবার। ব্যাটিং সহায়ক কন্ডিশনে বড় রান কী করে ডিফেন্ড করতে হয়, তা পরখ করে দেখা হলো না এশিয়া কাপের আগে। 

সঙ্গে দলও যে নিয়মিত ২০০ ছুঁইছুঁই রান করতে পারছে, সে অভ্যাসটা গড়ে তোলার ভালো সুযোগ ছিল নেদারল্যান্ডস সিরিজে। সেটাও যে পায়ে ঠেলে দেওয়া হলো! প্রথম দুই ম্যাচে শুধু জয়টাকেই মুখ্য না করে টস জিতে ব্যাটিং নিলে ২০০’র অভ্যাস তৈরির, সেটা ডিফেন্ড করার অভ্যাস নিয়ে হয়তো এশিয়া কাপে পা রাখা যেত। কিন্তু সাহস আর দূরদর্শিতার অভাব সেটা হতে দিল কই? সেটা হয়ে গেলে শুধু প্রাপ্তি নয়, এশিয়া কাপের প্রস্তুতিটা রূপ নিত পূর্ণতাতেই।

যদিও লিটন এই সিরিজের প্রাপ্তির খাতা কম কিছু দেখছেন না আদৌ। তার ভাষায়, ‘আমার কাছে মনে হয় অনুশীলন করাটা গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলনের চেয়ে ম্যাচে আপনি কতটা ডেলিভার করতে পারছেন। ম্যাচ খেললে আপনার উন্নতি হবে, গেম সেন্স বাড়বে। আমার মনে হয় আমরা এখন (এই সিরিজটা খেলার পর) ভালোভাবে প্রস্তুত এশিয়া কাপে যাওয়ার জন্য।’

খালি চোখে প্রাপ্তির খাতাটা একেবারেও খালি নয় বাংলাদেশের। অধিনায়ক লিটন দাস পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে টানা দুই সিরিজ হেরেছিলেন। তবে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান আর এবার নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সে দুঃসময়টা পেছনে ফেলে জয়ের অভ্যাস নিয়ে এশিয়া কাপে যাওয়া যাচ্ছে এখন। সব খামতি আড়াল করে সে অভ্যাসটা এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের আসরেও ধরে রাখতে পারলেই হয় এবার।

Side banner