ঢাকা শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে: তারেক রহমান

দৈনিক নতুন সংবাদ আগস্ট ২১, ২০২৫, ১০:১২ পিএম বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে: তারেক রহমান

আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে-এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভোট দেবার সুযোগ পেলে জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারে। এই ভয়ে পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির বিজয় ঠেকাও, এর মতন অন্তর্ঘাতী অপরাজনীতি চালু করেছিল। দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকেও গত ১৬-১৭ বছর ধ্বংস করে দিয়েছিল। লোকাল ইলেকশন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচনসহ প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় একই অবস্থা হয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে এবার ক্ষমতাসীন সরকার নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সহযোদ্ধা কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর আচরণেও সেই পলাতক স্বৈরাচারের সরকারের মত বিএনপির বিজয় ঠেকাও প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির বিজয় ঠেকানোর অপরাজনীতি করতে গিয়ে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদ সরকার দেশকে একটি তাবেদারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। 

বৃহস্পতিবার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্মানে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ মন্তব্য করেন।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য এখনো উপযোগী নয় বলে মন্তব্য করে তারেক রহমানবলেন, আমরা জানি বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি রয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক, ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য এখনো উপযোগী নয় বলেই আমরা কমবেশি মনে করি। কাকে কিংবা কোন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠানো হচ্ছে, অবশ্যই জনগণের সেটি জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতিতে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হচ্ছে, জনগণের সেটি জানার পরিষ্কার কোন সুযোগ নেই। যে কারণে রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জাতীয় সংসদে কিংবা সরকারে প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে অবশ্যই তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি হয়ে, আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে জনগণের রায় অর্জন করা জরুরি। 

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি ঘোলেটে করার অপচেষ্টা করছেন, আপনারা হয়তো নিজেদের অজান্তেই গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছেন। একই সঙ্গে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার পুনর্বসনের পথও হয়তোবা সুগম হচ্ছে। যদি আমরা গণতন্ত্র উত্তোরণের পথে শর্তের পর শর্ত আরোপ করতে থাকি তাহলে পরাজিত শক্তি সুযোগ নেবে।  

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যকার বিরোধ এমন পর্যায়ে নেয়া উচিত হবে না, যেই বিরোধকে পুঁজি করে পরাজিত ফ্যাসিবাদ নিজেদের অপকর্মগুলোকে জাস্টিফাই করার সুযোগ নিতে পারে। আমি মনে করি, আমরা মনে করি- প্রতিটি ইস্যুতে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হতেই হবে। এটি এমন কোন জরুরি নয়। তবে অবশ্যই, অবশ্যই পলাতক স্বৈরাচার বা যে পালাতক ফ্যাসিবাদ তাদের পুনর্বাসন ঠেকানো কিংবা দেশকে তাবেদার মুক্ত রাখার মত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে অবশ্যই ঐকমত্য এবং ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরি।

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তিনি বলেন, অতীতে দেখেছি বিভিন্ন সময় দেশে যারা নিজেদের কে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে বিবেচনা করেন সেই সম্প্রদায়ের উপর কিংবা তাদের ধর্মীয় স্থাপনা অথবা বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলোকে যদি আমরা পর্যালোচনা করে দেখি, তবে দেখব দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ হামলার ঘটনা কোন ধর্মীয় কারণে হয়নি। প্রতিটি ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করলে দেখা যাবে অধিকাংশ হামলার ঘটনার নেপথ্য ছিল অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অথবা অবৈধ লাভের আশা। কোন কারণেই যাতে করে কারো ওপর কোন হামলা কিংবা অবিচার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব। 

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে

মির্জা ফখরুল বলেন, অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে ‘একাত্তরকে ভুলিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ২৪‘র জুলাই-আগস্ট যেভাবে সত্য, ঠিক একইভাবে সত্য কিন্তু একাত্তরের নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। যদি ওঠে তাহলে আমাদের বাংলাদেশের যে আত্মা, সেই অস্তিত্ব রক্ষা পাবে না, এই কথাটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায় দাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য রনেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের তপন চন্দ্র মজুমদার, এসএন তরুণ দে, মিল্টন বৈদ্য, পূজা উদযাপন ফ্রন্টের জয়দেব জয়, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল বারী ড্যানি, জন গোমেজ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Side banner