ঢাকা সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

সাভারে অনিবন্ধিত অটোরিকশায় বিদ্যুতে বাড়তি চাপ, বাড়ছে লোডশেডিং

দৈনিক নতুন সংবাদ অক্টোবর ২০, ২০২৫, ০১:২০ পিএম সাভারে অনিবন্ধিত অটোরিকশায় বিদ্যুতে বাড়তি চাপ, বাড়ছে লোডশেডিং

শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা সাভার-আশুলিয়া। এখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষের স্থায়ী বসবাস। এছাড়া এ এলাকায় কল-কারখানাগুলোতে দিন-রাতে কাজ করে কয়েক লাখ মানুষ। অন্যদিকে সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বেড়ে চলেছে অস্বাভাবিক হারে। এসব অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে বাড়ছে গ্যারাজও। 

 

স্থানীয়দের দাবি, সাভার পৌর এলাকায় ২ হাজার ৩৫০টি অটোরিকশা নিবন্ধিত হলেও সড়কে দশ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করে। যার বেশিরভাগই অনিবন্ধিত। ফলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি বাড়তি বিদ্যুৎতের চাপ পড়ছে জাতীয় গ্রিডে। ফলে বাড়ছে লোডশেডিং।

সাভার পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, সাভার পৌর এলাকায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে নিবন্ধিত ২ হাজার ৩৫০টি অটোরিকশা চলাচল করছে। এছাড়া ১শটি ইজিবাইক রয়েছে। চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে নতুন করে ২৫০টি অটোরিকশা নিবন্ধন করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, সাভার পৌর এলাকায় অন্তত দশ হাজারের বেশি অটোরিকশা রয়েছে। যার বেশিরভাই রয়েছে অনিবন্ধিত।

অটোরিকশাচলক সফিক বলেন, পৌর এলাকায় রিকশার নিবন্ধন করতে হয়। তবে অনেকেই নিবন্ধন না করেই রিকশা চালাচ্ছে। রিকশার নিবন্ধন করতে ভ্যাটসহ ২ হাজার ১৭০ টাকা এবং ইজিবাইকের জন্য ৩ হাজার ৩৫০ টাকা খরচ পড়ে। তারপরেও বিভিন্ন রকম কাগজপত্রের প্রয়োজন হয় । তাই অনেকেই ঝামেলায় এড়াতে  নিবন্ধন করতে যায় না।

তবে সাভার পৌরসভায় অটোরিকশা নিবন্ধনের দৃশ্যমান কোনো উদ্বেগ দেখা যায়নি। এ বিষয়ে সাভার পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আব্দুল মোত্তালেবর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়নি।

 

গ্যারেজ মালিক মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, ২০২২ সালে নতুন রিকশা দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ছিল। কিন্তু গত দুই বছরে রিকশার দাম বেড়ে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়েছে। এছাড়া পুরাতন রিকশা কিনতে গেলেও ন্যূনতম ৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। মূলত রিকশার ব্যাটারির ওপর দাম বাড়ে-কমে। রিকশার কন্ট্রোলার, মিটার, মোটরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চায়নার তৈরিকৃত। এছাড়া বাংলাদেশেও বিভিন্ন কারখানা গড়ে ওঠেছে বলে জানান তিনি।  

অটোরিকশাচালক চালক মুকুল বলেন, প্রতি মাসের রিকশা যন্ত্রাংশের মেরামতের জন্য প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া রিকশার ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ ওয়াটের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য গ্যারেজ মালিককে প্রতিদিন দেড়শ টাকা করে দিতে হয়। রিকশার বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। আগে একটি জুবরাজ টায়ারের দাম ছিল ৯শ টাকা। কিন্তু এখন একটি টায়ারের দাম বেড়ে ১৬শ টাকা হয়েছে।

অটোরিকশা চার্জ দিতে বাড়ছে গ্যারেজ। এ কারণে বিদ্যুতে চাপ পড়ছে। এ নিয়ে সাভার গেন্ডা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহাপরিচালক (জিএম) গোলাম কাউসার তালুকদার বলেন, ১ হাজার ১৯২টি রিকশার জন্য গ্যারেজে বৈধ বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে। এতে প্রায় ২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। সাভার-আশুলিয়া যেহেতু শিল্পাঞ্চল সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। অটোরিকশায় বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলে বাসা-বাড়িতে লোডশেডিং কমানো সম্ভব বলে জানান তিনি।

সাভার উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহ উদ্দিন খান নঈম বলেন, ইজিবাইক এবং অটোরিকশার নির্দিষ্ট কোনো কাঠামো নেই। যেই কারণে দেখা যায়, একটি রিকশার চাকা চিকন আবার কোনোটার চাকা মোটা হয়। এক্ষেত্রে রিকশা চালকের অদক্ষতা এবং অতিরিক্ত গতির ফলে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া অটোরিকশা চার্জের কারণে বিদ্যুতের ওপর প্রভাব পড়ছে এবং পুরাতন ব্যাটারি পরিবেশকে নষ্ট করছে। তাই অটোরিকশার নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি, চালককে প্রশিক্ষণ এবং আইনের কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে বলে  দাবি জানান তিনি।

সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ সালেহ আহমেদ বলেন, আমরা টিম আকারে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে অটোরিকশাগুলো মহাসড়কে না আসে। তবে দুর্ঘটনারোধে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ হলে দুর্ঘটনার প্রবণতা কমে যাবে।

Side banner