শরৎ হাওয়ায় চারপাশে যখন দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই নাটোরে চমক সৃষ্টি করেছে এক অভিনব শিল্পকর্ম। শহরের লালবাজার কদমতলার রবিসূতম সংঘের পূজা মণ্ডপে সোনালি পাটের আঁশে গড়া দুর্গা প্রতিমা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। দূর থেকে প্রতিমাটিকে দেখলে মনে হবে, সোনার ঝলমলে আস্তরণে মোড়ানো দেবী দশভুজা যেন দাঁড়িয়ে আছেন।
প্রায় ২০ কেজি সোনালি পাটের বুননে তৈরি এই প্রতিমা এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিমা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন ভক্ত ও কৌতূহলী মানুষ। কেবল দুর্গা নয়, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, এমনকি অসুর আর দেবীর বাহন সিংহকেও সূক্ষ্ম কারুকার্যে পাটের আঁশে সাজানো হয়েছে। শাড়ি, অলংকার থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নিখুঁত অংশেও ব্যবহার করা হয়েছে পাটের সোনালি আঁশ।
এই অনন্য সৃষ্টির কারিগর লালবাজারের প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। তার নেতৃত্বে চার সদস্যের শিল্পীদল প্রায় দুই মাস ধরে রাত-দিন শ্রম দিয়েছেন প্রতিমা গড়তে।
বিশ্বজিৎ বলেন, প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট ও বিচালির কাঠামো দাঁড় করানো হয়। এরপর মাটি দিয়ে প্রতিমার অবয়ব গড়ে তুলি। মাটি শুকোনোর পর সোনালি পাটের আঁশ দিয়ে বুনন করি। কাজটা সহজ ছিল না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই দেবী যেন সোনায় মোড়ানো।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরই আয়োজকরা নতুন কিছু করার অনুরোধ করেন। গত বছর তার ধান দিয়ে তৈরি প্রতিমা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। এ বছরও ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা থেকে পাট দিয়ে প্রতিমা গড়ার ভাবনা আসে। তিনি আশা করেন, এবারও দর্শক-ভক্তরা শৈল্পিকতায় মুগ্ধ হবেন।
রবিসুতম সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ রায় বলেন, আমরা সবসময় ভক্তদের জন্য ভিন্নতা আনার চেষ্টা করি। গত বছর ধানের প্রতিমা যেমন আলোড়ন তুলেছিল, এবার পাটের প্রতিমাও সেই ধারাবাহিকতার অংশ। প্রতিবারই বিশ্বজিৎ পাল প্রতিমা তৈরি করেন নিখুঁত যত্নের সঙ্গে। এই ইউনিক আইডিয়াটাও তার কাছ থেকেই এসেছে।
নাটোরে এ বছর ৩৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের চেয়ে ১৪টি বেশি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সবাই মিলে পূজার সার্বিক নিরাপত্তা দেবেন। প্রতিটি মণ্ডপেই সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। তিনি আশাবাদী, শান্তিপ্রিয় নাটোরে নির্বিঘ্নে পূজা সম্পন্ন হবে।
আপনার মতামত লিখুন :