ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে চলতি বছরের জুলাইয়ে সই হওয়া অভিবাসন ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া। ফরাসি উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনার এই পরিকল্পনা শুরু করছে দুই দেশ।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, প্রথম ফেরত পাঠানো হবে মাত্র কয়েকজনকে। তিনি বলেন, এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। প্রয়োজনে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা যেতে পারে।
ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী শনিবার থেকেই ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে অভিবাসী ফেরত পাঠানো শুরু হবে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আশা করছে খুব শিগগিরই প্রথম দলকে ফেরত পাঠানো হবে। আমাদের সীমান্ত রক্ষা করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছে আটক হওয়া অনিয়মিত অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। এরপর ফরাসি অভিবাসন ও ইন্টিগেশন বিষয়ক দপ্তর থেকে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরার প্রস্তাব দেওয়া হবে। যারা তা প্রত্যাখ্যান করবেন এবং আশ্রয়ের আওতায় পড়বেন না, তাদের ক্ষেত্রে জারি হতে পারে ‘অব্লিগেশন দ্য কুইটার লে টেরিতোয়ার’ (ওকিউটিএফ) বা ফ্রান্স ছাড়ার বাধ্যতামূলক নির্দেশ।
ফরাসি অভিবাসন দপ্তরের মহাপরিচালক দিদিয়ে লেসচি বলেন, আমরা চাই, তারা যেন এই সহায়তা গ্রহণ করে নিজ দেশে ফিরে যায়। তবে যারা রাজি হবেন না, তাদের জন্য আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো প্রতি অভিবাসীর বিপরীতে ফ্রান্স থেকে নিয়মিত পথে আসা সমানসংখ্যক মানুষকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। এই ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ নীতিকে দুই দেশই ভারসাম্য রক্ষার একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করছে।
• সমালোচনা
ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের মধ্যে চলতি বছরের ১০ জুলাই স্বাক্ষরিত এই চুক্তি নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিয়মিত সমালোচনা করে আসছে। তাদের মতে, এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ পথ আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়বে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটিতে পৌঁছেছেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। এটি বছরের এই সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
শুধু গত সপ্তাহেই দুই দফায় চ্যানেল পার হওয়ার সময় তিন জন অভিবাসী মারা গেছেন এবং আরও তিন জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ফরাসি ও ব্রিটিশ সরকারের মতে, এই পাইলট প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো, একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যানেল পাড়ি ঠেকানো এবং অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের জন্য বৈধ পথ খোলার মাধ্যমে অভিবাসীদের নিরুৎসাহিত করা।
তবে অভিবাসনবিষয়ক সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, এই চুক্তির ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে এবং ঝুঁকি বাড়বে। তারা মনে করছে, এভাবে সীমান্ত কঠোর করার পরিবর্তে নিরাপদ পথ বাড়ানোই হবে টেকসই সমাধান। ইনফোমাইগ্রেন্টস।
আপনার মতামত লিখুন :