‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি নুর খানে মার্কিন সামরিক মালবাহী বিমানের অবতরণ ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। দিল্লির সন্দেহ, ত্রাণসামগ্রীর আড়ালে মার্কিন সামরিক বিমানগুলো বয়ে এনেছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নুর খান ঘাঁটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপর থেকে গত তিন মাস বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় নুর খানে আমেরিকার সামরিক বিমানের আনাগোনায় উঠেছে একাধিক প্রশ্ন।
ইসলামাবাদের হাত ধরে ফের কোনও ষড়যন্ত্রে নেমেছে ওয়াশিংটন? বিপদের আশঙ্কায় প্রতিবেশীর ওপরে কড়া নজর রাখছে নয়াদিল্লি।
৬ সেপ্টেম্বর নুর খান বিমানঘাঁটিতে মার্কিন বিমানবাহিনীর একাধিক সামরিক বিমান অবতরণের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় হইচই।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িংয়ের তৈরি ‘সি-১৭ গ্লোবমাস্টার’ নামের মালবাহী উড়োজাহাজগুলোকে সেখানে নামতে দেখা যায়।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জানানো হয়, বন্যাকবলিত পাকিস্তানের জন্য বিপুল পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গিয়েছে ওই সব বিমান।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন রাওয়ালপিন্ডির সেনা জেনারেলরা। কিন্তু তার পরেও বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে আছে ভারত।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সামরিক মালবাহী বিমানগুলো কুয়েত ঘুরে রাওয়ালপিন্ডি সংলগ্ন নুর খানে অবতরণ করে। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের হাতে।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বন্যার ত্রাণসামগ্রী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তিন তারা যুক্ত অফিসারদের হাতে তুলে দেন সমপদমর্যাদার মার্কিন জেনারেলরা। ‘সি-১৭ গ্লোবমাস্টার’-এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলেন তারা।
এই রকমের মোট ছ’টি বিমান আসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদের ‘আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতর’ বা আইএসপিআর (ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স)।
নুর খান ঘাঁটিতে সামরিক মালবাহী বিমান অবতরণের পর এক্স হ্যান্ডলে (আগের টুইটার) একটি পোস্ট করে পাকিস্তানের মার্কিন দূতাবাস। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ চেয়ে আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিল পাকিস্তান। সেই আর্জি অনুযায়ী সামরিক মালবাহী বিমানে প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।’
নুর খান ঘাঁটিতে পণ্য ইসলামাবাদের হাতে তুলে দিয়েছেন চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) ন্যাটলি বেকার। পাশাপাশি বিধ্বংসী বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য গভীর সমবেদনাও জানিয়েছেন তিনি।
অন্য দিকে বিবৃতি দিয়ে ইসলামাবাদের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা আইএসপিআর জানিয়েছেন, মূলত তাঁবু, পানি নিষ্কাশনের পাম্প এবং জেনারেটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী সামরিক মালবাহী বিমানে পাঠিয়েছে আমেরিকা। বন্যাদুর্গত এলাকায় বহু ত্রাণশিবির খুলেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। সেখান থেকেই বিলি হবে তাঁবু এবং জেনারেটর। পাশাপাশি, পানি নামাতে পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একাংশ অবশ্য সামরিক মালবাহী বিমানে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহের তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাদের আশঙ্কা, ত্রাণের আড়ালে অত্যাধুনিক হাতিয়ার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে পারে আমেরিকা।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, বন্যাদুর্গতদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কেন সাহায্য চাইল পাক সেনা? ইসলামাবাদের সরকার বা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আমেরিকার কাছে এই অনুরোধ পাঠাতেই পারতেন।
দ্বিতীয়ত, ত্রাণসামগ্রী নিয়ে লাহোর বা ইসলামাবাদের বিমানবন্দরে অবতরণে কোনও অসুবিধা ছিল না ওয়াশিংটনের ‘সি-১৭ গ্লোবমাস্টার’-এর। কিন্তু সেটা না করে বেছে নেওয়া হল নুর খানের মতো বিমানবাহিনীর ঘাঁটি।
তৃতীয়ত, সামরিক বিমান থেকে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণের সময় পাক সরকারের কোনও বেসামরিক কর্মকর্তাকে নুর খানে দেখতে পাওয়া যায়নি।
এসব কারণে উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের। ত্রাণের আড়ালে আবার অস্ত্র পাঠালো না-তো আমেরিকা?
আপনার মতামত লিখুন :