ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেয়ারেলিতে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর ইসলামিয়া ময়দানে ব্যাপক ভিড় জমে যায়। স্থানীয় আলেম ও ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের প্রধান মাওলানা তৌকীর রাজার আহ্বানে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি মূলত ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ প্রচারণার সমর্থনে আয়োজন করা হয়।
কানপুরে এই প্রতিবাদ শুরু হয় গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে, যখন ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী শোভাযাত্রায় একটি তাঁবুর ওপর ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টার টাঙানো হয়। পুলিশ সেটি সরিয়ে ফেলে, এরপর কানপুর পুলিশ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। এ ঘটনার জেরে গোটা ভারতেই প্রতিবাদ শুরু হয়।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর পুলিশি উপস্থিতির মাঝেই ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। পুলিশের অভিযোগ, কিছু লোক উসকানিমূলক স্লোগান দেয় এবং পরে পাথর ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ঘটনাস্থলজুড়ে জুতা, স্যান্ডেল ও ইটপাটকেল ছড়িয়ে থাকে। এ ঘটনায় সেখান থেকে অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংঘর্ষে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান বেয়ারেলির আইজি অজয় সাহনি।
তার ভাষায়, ‘পুলিশ ফ্ল্যাগ মার্চ করছিল এবং সবাইকে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু পরে ভিড় থেকে গুলি চালানো হয় ও পাথর নিক্ষেপ করা হয়। কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মনে হচ্ছে’।
এদিকে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব পুলিশের লাঠিচার্জকে সরকারের ব্যর্থতা আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সরকার পরিচালিত হয় সম্প্রীতি আর সদিচ্ছার মাধ্যমে, লাঠিচার্জ দিয়ে নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি’।
মৌ ও বাঘপতে উত্তেজনা
এদিকে বেয়ারেলি থেকে প্রায় ৬০০ কিমি দূরে মৌ নামক স্থানে একইভাবে নামাজের পর মানুষ বিক্ষোভে নামে। সেখানেও পুলিশের বাধা পেয়ে ভিড় থেকে পাথর ছোড়া হলে, লাঠিচার্জ চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
অন্যদিকে বাঘপতে অনুমতি ছাড়া শোভাযাত্রা বের করলে পুলিশ বাধা দেয়, এতে বাগবিতণ্ডা হয়। পুলিশ সেখানে দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
বিতর্কের সূচনা
বিতর্কের সূচনা হয় কানপুরে। যেখানে স্থানীয় হিন্দু সংগঠনগুলো অভিযোগ তোলে যে, মিশ্র এলাকায় উসকানিমূলক উদ্দেশ্যে এই পোস্টার বসানো হয়েছে। হিন্দু পক্ষ দাবি করে, তাদের পোস্টার ভাঙচুর করা হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিম পক্ষের অভিযোগ—তারা কেবল নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করায় টার্গেট হচ্ছেন।
পরে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, #ILoveMuhammad হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করতে থাকে।
কানপুর পুলিশ জানায়, এফআইআর পোস্টারের কারণে নয়, বরং রাস্তায় তাঁবু বসানো নিয়ে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেন, ‘কেউ যদি বলে ‘আই লাভ ইউ’, তাহলে সমস্যা কোথায়? তাহলে ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ বললে সমস্যা কেন? আবার ‘আই লাভ মহাদেব’ বললেও তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়’।
এটি মূলত মুসলিমদের সামাজিকভাবে বয়কট করার এক পদ্ধতি বলেও দাবি করেন তিনি।
দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ
এদিকে এই ইস্যুতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের আনাচে কানাচে। মুম্বাইয়ের মালভানিতে আলেমরা থানায় গিয়ে অভিযোগ করে বলেন, মুসলিমদের পোস্টার সরিয়ে এফআইআর দায়ের করা হলেও হিন্দু পক্ষকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
ওদিকে গুজরাটের গান্ধীনগরে বুধবার রাতে আপত্তিকর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এতে সেখান থেকে প্রায় ৬০ জনকে আটক এবং ৪টি দোকান ও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও কর্ণাটকের দাভানগেরেতে পোস্টার ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উত্তরপ্রদেশের উনাও, মহারাজগঞ্জ, লখনৌ ও কৌশাম্বীতেও উত্তেজনা ছড়ায়।
‘আই লাভ মহাদেব’ পাল্টা প্রচারণা
এদিকে বারাণসিতে ‘আই লাভ মহাদেব’ শ্লোগান নিয়ে পাল্টা প্রচার শুরু হয়। শঙ্করাচার্য নরেন্দ্রানন্দের নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে অভিযোগ তোলা বলা হয়, ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ আন্দোলনের আড়ালে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র চলছে।
আপনার মতামত লিখুন :