চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ফল জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুক্রবার যুগান্তরে ‘চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ১০ লাখ খাতা গায়েব, বড় জালিয়াতি চাপা ছোট ভুল বলে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।
এরপরই রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদকের একটি দল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে অভিযান চালায়। এ সময় চলতি বছরের এসএসসির উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের জালিয়াতি সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, গত বছরের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেছিল। পরে যাচাই-বাছাইয়ে আরও ১৫ জনের তথ্য পাওয়া যায়। পরে ১৭ জনের ফল বাতিল করেছিল শিক্ষা বোর্ড। এছাড়া ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফলে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের হিসাব ও নিরীক্ষা শাখার উপ-পরিচালক মুহাম্মদ একরামূল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করতে না পারায় কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আরও ১৫ কর্মদিবস বাড়ানো হয়েছে।
অভিযান শেষে দুদকের কর্মকর্তারা জানান, এবারের এসএসসির পুনঃনিরীক্ষণে ৩৪টি উত্তরপত্রে ফল জালিয়াতি চেষ্টা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দুদক কর্মকর্তারা। এছাড়া আরও কিছু অভিযোগ ছিল। সেগুলোর নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা যেসব তথ্য চেয়েছেন, সেগুলো দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া যেসব জালিয়াতির বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে, আমরাও সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি করেছি। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিলামে কেনা প্রায় দেড় কোটি টাকার কাপড়সহ দুইটি কনটেইনার গায়েবের ঘটনায়ও তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এ বিষয়ে রোববার দুদকের একটি দল চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান, কাস্টম হাউসের কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলামে ৮৫ লাখ টাকায় প্রায় ২৭ টন ফেব্রিক্স ক্রয় করেন শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের মালিক সেলিম রেজা। পরে তিনি শুল্ক, দাম ও বন্দরের চার্জ বাবদ আরও এক কোটি সাত লাখ টাকা পরিশোধ করেন; কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাক নিয়ে ইয়ার্ডে গেলে জানানো হয়, কনটেইনারটি নেই। অপর এক নিলামে পাওয়া কাপড়ের কনটেইনার খালাস করতে গেলে সেটিরও খোঁজ পাচ্ছেন না ইয়াকুব চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ী। তিনিও কনটেইনারে থাকা ফেব্রিকস বাবদ ৪২ লাখ টাকা কাস্টম হাউসে জমা দেন।
এ বিষয়ে দুদকের সহকারী কমিশনার সৈয়দ ইমরান জানান, আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল দুইজন বিডার কাস্টম হাউস থেকে নিলামে পণ্য কিনেছেন। কেনার আগে তারা ইয়ার্ডে পণ্য দেখে এসেছেন। সব চার্জ পরিশোধ করে ডেলিভারির জন্য গেলে জানানো হয় কনটেইনারগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর তারা বন্দর ও কাস্টমসে আবেদন করেছেন। তারা এখনো পণ্য বা টাকা ফেরত পাননি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
আপনার মতামত লিখুন :