জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের পর ইরানকে উত্তেজনা না বাড়িয়ে আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তিন দেশ জানিয়েছে, তেহরানের অবিরাম পারমাণবিক কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং সহযোগিতার অভাবের কারণে তাদের ‘শেষ উপায় হিসেবে’ এই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘আমরা ইরানকে যেকোনও উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তারা আরও বলে, ‘জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল মানে কূটনীতির সমাপ্তি নয়।’
গত সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেন, দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার কোনও ইচ্ছা নেই। তিনি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালকে ‘অন্যায়, অবিচার এবং অবৈধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে ইরানের ওপর জাতিসংঘের ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়—যা এক দশক আগে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছিল।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইরান নিষিদ্ধ পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়। প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত নেন এবং চুক্তিটিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যা দেন। তার পূর্বসূরি বারাক ওবামা যৌথ বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) চুক্তিটি করেছিলেন।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইরানের সঙ্গে তিন দেশের আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর কোনও চুক্তি হয়নি।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, যেহেতু ইরান বারবার এই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে, তাই ই-থ্রির আর কোনও পথ খোলা ছিল না। তাদের নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চালু করতে হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে আগের প্রস্তাবগুলো পুনরায় কার্যকর হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, ইরান আমাদের উদ্বেগ দূর করার মতো পদক্ষেপ নেয়নি, আমাদের শর্ত পূরণ করেনি, যদিও বিস্তৃত আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
বিশেষ করে তেহরানের জাতিসংঘের পারমাণবিক তদারকি সংস্থা আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা না করার দিকটি উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান আইএইএ পরিদর্শকদের তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশাধিকার দেয়নি, উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ সম্পর্কিত কোনও প্রতিবেদনও দেয়নি।
গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর তেহরান আইএইএ পরিদর্শন স্থগিত করে।
তবে পারমাণবিক অস্ত্র-নিরোধ চুক্তির অধীনে ইরান আইনি বাধ্যবাধকতায় রয়েছে তাদের স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দিতে। শুক্রবার আইএইএ নিশ্চিত করেছে যে পরিদর্শন পুনরায় শুরু হয়েছে।
তবে আলোচনার পাশাপাশি ইরান সতর্ক করেছে, নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনা হলে এই প্রক্রিয়াও ঝুঁকির মুখে পড়বে।
যদিও পেজেশকিয়ান আগের হুমকি থেকে সরে এসেছেন যে ইরান এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসবে। তবে শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তেহরানকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে না—তাহলেই সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।
শনিবার ইরান ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের পরামর্শের জন্য দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :